২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিম্নমানের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল

বন্ধ হোক শিশুদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা

-

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ জন্য দেশে দেশে শিশুদের বেড়ে ওঠা নিয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়ে থাকে। আর উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের বেড়ে ওঠার বিষয়ে কোনো পর্যায়েই ছাড় দেয়া হয় না। কারণ, শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ওপরই নির্ভর করে জাতির ভবিষ্যৎ দিনগুলো কেমন যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি হলে তা আমাদের জাতীয় জীবনের সামনের দিনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। স্বভাবিক জ্ঞানবুদ্ধি দিয়েই যে কেউই অনুধাবন করতে পারেন।
শিশুদের উপযোগী স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশে দেশে সরকারি পর্যায়ে থাকে বিভিন্ন কর্মসূচি। বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের ওপর সরকারিভাবে সচেতন নজর থাকে। সব দেশেই গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় শিশুস্বাস্থ্যের বিষয়টি। সবারই জানা, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। সামান্যতেই এরা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। তাদের নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ওষুধের মান নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা হয় না। তবে আমাদের দেশে তেমনটি দেখা যায় না। আমাদের দেশেও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য সরকারিভাবে রয়েছে নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির লক্ষ্য : শৈশবেই শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা। তেমনি একটি কর্মসূচি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুমৃত্যুর ঝুঁঁকি কমানো এবং অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের দুই কোটির বেশি শিশুকে বছরে দু’বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। বিশ্বব্যাংকের টাকায় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সংগ্রহের ব্যবস্থা করে থাকে। সত্তরের দশক থেকে সরকার প্রথমে ইউনিসেফের কাছ থেকে নিখরচায় ওই ওষুধ পায়। পরবর্তী সময়ে একপর্যায়ে সরকার নিজ উদ্যোগেই দেশের বাইরে ও ভেতরের নানা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ওষুধ সংগ্রহ করে। অথচ এবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনে যে ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল, তা নিম্নমানের হওয়ায় এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে এই ক্যাপসুল ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে শিশুদের খাওয়ানোর কথা ছিল। নি¤œমানের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের অভিযোগের মুখে কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়। এর আগেও একই ধরনের অভিযোগের মুখে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে দুই দফা এ কর্মসূচি বন্ধ থেকেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: মুরাদ হাসান গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহ করা লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলগুলো নষ্ট থাকায় সারা দেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই ভালো ক্যাপসুল সংগ্রহ করা হবে এবং নতুন তারিখ ঘোষণা করে শিশুদের খাওয়ানো হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ঘুরেফিরে বারবারই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের নামে কেন ঝুঁঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে দেশের কোটি কোটি শিশুকে। বিষয়টি নিয়ে এক দিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকছেন অভিভাবকেরা, অন্য দিকে জাতীয় কর্মসূচির আওতায় সরকারের এ উদ্যোগও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। উল্টো দিকে পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে থাকা চক্রটি বারবারই থেকে যাচ্ছে আড়ালে, ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গতকাল যে ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল, তা কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই আদেশের আওতায় দুই কোটি ৭০ লাখ পিস ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে চলে নানা টালবাহানা। এমনকি আদালতেও ঘুরপাক খায় এ-সংক্রান্ত মামলা। একপর্যায়ে কয়েক মাস আগে পুরনো সেই ওষুধই সরবরাহ নেয় কর্তৃপক্ষ। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরও শুরুতেই ভারতীয় ওই প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ আদেশ দিতে আপত্তি জানিয়েছিল।
আমাদের কথা হচ্ছেÑ শিশুস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে যে কর্মসূচি, তা যদি কোটি কোটি শিশুকে আরো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে, তাহলে এমন কর্মসূচির কি আদৌ প্রয়োজন আছে? তাই এ কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সরকারকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল কেনায় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কারা কারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement