২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

কারণ নির্ণয় ও প্রতিকার জরুরি

-

দেশের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ বছরে ২৩ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার কারণ জানার দায়িত্ববোধ করছে না। অপর দিকে, নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার-পরিজন এবং সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়Ñ বিষণœতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, কর্মজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা, সম্পর্কের টানাপড়েন প্রভৃতি কারণে তারা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। শুধু ঢাকায় নয়, রাজধানীর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ, গত সোমবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, নানা কারণে চাপে থাকা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতর রয়েছে। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের ৩৮ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য এখানে স্থায়ী পরামর্শদাতা আছেন মাত্র একজন। তদুপরি, শিক্ষার্থীদের আত্মহননের কারণ জানা বা উদঘাটনের কোনো উদ্যোগ নেই এবং এই দফতরে উল্লিখিত বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। আবার শিক্ষার্থীদের অনেকে এই দফতর সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যা হোক, প্রক্টর অফিস এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের ১১ জনই আত্মহত্যা করেছেন গত তিন বছরে। ২০১৭ সালে তিনজন এবং গত বছর সাতজনের আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স বিভাগের এক ছাত্র একটি ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা যান। সহপাঠীরা জানান, পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হওয়ায় তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। পরের মাসেই এমবিএ’র এক ছাত্র তার অ্যাকাডেমিক ভবনের ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। গত ১৪ বছরের মধ্যে বিগত তিন বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছেন, ‘বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী খাপ খাওয়ানোর সমস্যা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়। অনেকে আসে কিছু সমস্যা নিয়ে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ পরীক্ষাভীতি, মানসিক চাপ, বিষণœতা, সম্পর্কের জটিলতা ও ভাঙন প্রভৃতি।’ অন্য দিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থী তাদের কোর্সের অংশ হিসেবে ছয় মাস কাজ করছেন পরামর্শদান দফতরের খণ্ডকালীন পরামর্শদাতা হিসেবে। ঢাবির ভিসি জানান, পরামর্শদান দফতরে জনবল বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া, সম্প্রতি সব শিক্ষককে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জীবন ও এর গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রেরণাদায়ী বক্তব্য রাখেন।
কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থী তথা তরুণসমাজ জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। তারাই আগামী দিনে রাষ্ট্রের হাল ধরবেন। তাই তাদের মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার জন্য তাদের পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। দেখা যাচ্ছে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নিচের দিকে বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে ছাত্রজীবন থেকে। আর ওপরের দিকে অনেকে একেবারে ইহজীবন থেকেই চিরতরে ঝরে পড়ছেন আত্মহত্যার মাধ্যমে। দুটোই আমাদের দেশ ও জাতির জন্য খুবই উদ্বেগজনক। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ জানার কোনো প্রয়াস না থাকে এবং মানসিক বিষয়ে পরামর্শদানকারী থাকেন খুব নগণ্য, তাহলে বাংলাদেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষালয়ে এ ক্ষেত্রে কী অবস্থা বিরাজ করছে, তা সহজেই বোধগম্য। কিন্তু এমন অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না।
আমরা মনে করি, যেকোনো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা কিংবা এ জন্য চেষ্টা করার কারণ জানা এবং সে মোতাবেক অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য। এ জন্য অন্তত সব ক’টি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্তসংখ্যক কাউন্সিলর বা পরামর্শদাতাসহ আলাদা দফতর খোলা উচিত। তদুপরি, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, শিক্ষাঙ্গনের বৈষম্যমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক সমস্যা দূর করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement