২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন

অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তদন্ত প্রয়োজন

-

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে; কিন্তু সরকারি জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল-জোটগুলো এ নির্বাচনকে জালিয়াতি ও প্রহসনের নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছে এবং নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই সাথে নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকারবিরোধী পক্ষগুলোর এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের সুযোগ নেই বলে অভিমত দিয়েছে।
তবে গণমাধ্যমে নির্বাচনী নানা অভিযোগের কথা প্রচারিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে মানবাধিকার সংস্থাগুলো থেকে নির্বাচনী নানা অনিয়মের কথা জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিআইবি অন্যতম। টিআইবি গত পরশু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ দিকে, ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ৪৭টি আসনেই অনিয়ম দেখতে পেয়েছে তারা। এসব অনিয়মের ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। অনুষ্ঠানে টিআইবির গবেষণা দলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম লিখিত প্রতিবেদনে বলেনÑ সংস্থাটি দৈবচয়নের মাধ্যমে ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টিতে গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৪৭টি আসনে দেখা যায়Ñ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা হয়, বুথ দখল করে সিল মারা হয়, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো বা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়, অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয়া হয় এবং ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবেদনে পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া, বেশির ভাগ কেন্দ্র আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগ এবং বেশির ভাগ কেন্দ্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকার অভিযোগের তথ্য রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ৫০টি আসনের ৪২টিতে এক বা একাধিক কেন্দ্রে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ভূমিকা ছিল নীরব। ৪১টি আসনে জাল ভোট দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে সিল মারার তথ্য মিলেছে ৩৩টি আসনে। বুথ দখল ও জাল ভোট পড়ে ৩০ আসনে। পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে বাধা ও বের করে দেয়া হয় ২৯ আসনে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা ও জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করার তথ্য মিলেছে ২৬ আসনে। ভোট শেষ হওয়ার আগেই ব্যালট শেষ হয়ে যায় ২২টি আসনের এক বা একাধিক কেন্দ্রে। আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো হয় ২১টি আসনে। ব্যালট বাক্স আগে থেকেই ভরে রাখা হয় ২০ আসনে এবং প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা হয় ১১টি আসনে।
অভিযোগগুলো ভয়াবহ। এ ছাড়া, এমন আরো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে উল্লিখিত গবেষণা প্রতিবেদনে। অভিযোগগুলো সত্য হলে এ নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়ে। টিআইবি এসব অভিযোগের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। সরকারের উচিত বরাবরের মতো এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান নয়, গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ধারণ করা। আমরা মনে করি, গুরুতর এসব অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

 


আরো সংবাদ



premium cement