২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুর্নীতিবিরোধী লড়াই

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকর হোক

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব নেয়ার পর গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের সময় তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং এ যাবৎকালের অর্জনগুলো সমুন্নত রাখার জন্য দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কোনো দেশের পক্ষেই দুর্নীতি শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো এটা প্রতিরোধ করা, যাতে তা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এবং আমাদের সব সাফল্য ম্লান করে না দেয়। সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সবার আগে প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থভাবেই চিহ্নিত করেছেন, দুর্নীতি রুখে দিতে না পারলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং এ যাবৎকালের অর্জনগুলো ভেস্তে যাবে, সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। তার এই বিচক্ষণ পর্যবেক্ষণের বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। আমরা তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই, তার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
এ প্রসঙ্গে বলার কথা এই যে, দুর্নীতির নানা রূপভেদ আছে। একজন সাধারণ কেরানি বা পুলিশের দুর্নীতি আর একজন সচিব, এমপি, মন্ত্রীর দুর্নীতির চরিত্র ভিন্ন। কোনো দুর্নীতিই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু দায়িত্ব ও ক্ষমতার অন্তর্গত অবস্থান থেকে দুর্নীতি করা হলে তা সমাজ- রাষ্ট্রকে সমূহ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। কারণ, তা গোটা সমাজকে প্রভাবিত করে এবং সাধারণ মানুষ দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তারা মনে করে দুর্নীতি না করে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।
স্বীকার করতেই হবে, দুর্নীতির বিষবাষ্প আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় আশা করা হতো, অন্তত তরুণেরা এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু এখন তেমনটা মনে করার কোনো উপায় নেই। লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে যে তরুণ কর্মজীবনে ঢোকে তার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য থাকে কী করে, কত তাড়াতাড়ি তার লগ্নি করা অর্থ তুলে নিতে পারবে। এই অধঃপতন এক দিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতির প্রশ্রয় ও আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে এটিকে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। এর দায় রাজনীতিকেরা এড়াতে পারেন না।
রাজনীতি যে আজ লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে তার একমাত্র কারণ, রাজনীতি করলে দুর্নীতি করার হাজারটা পথ খুলে যায়। ক্ষমতার দাপটে তিলকে তাল করা যায়। একজন ছাত্রনেতাও ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্স গড়ে তুলতে পারে। এমপি, মন্ত্রীদের তো কথাই নেই। এই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিকেরা অনেকাংশে দায়ী। কারণ, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তাদেরই। সে জন্য রাজনীতিকেরা ব্যক্তিজীবন, দলীয় ও রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে দুর্নীতিমুক্ত না থাকতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা খুব একটা কার্যকর হবে না।
বর্তমান সরকার উন্নয়নের যে অঙ্গীকার নিয়ে আবারো ক্ষমতায় এসেছে, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দরকার জাতীয় জীবনের সব স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা; দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধু জাতীয় স্বর্থের দিক বিবেচনায় কার্যক্রম হাতে নেয়া। বর্তমান বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভারতের চেয়েও এগিয়ে আছে। এটি অবশ্যই আমাদের সরকারগুলোর সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, পাকিস্তানের জনগণ আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বাংলাদেশের মতো হতে চায়, এর চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আর হতে পারে না। তিনি বলেছেন, জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে তার একটা ভিশন থাকতে হবে, দিকনির্দেশনা থাকতে হবে, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেটা না থাকলে কোনো দেশ এগোতে পারবে না। আমরা মনে করি, দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হলে আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন মোটেই কষ্টসাধ্য হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement