২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভোলায় শহররক্ষা বাঁধে অনিয়ম

দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে

-

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছে নতুন সরকার। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে প্রথম কর্মদিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান ঘোষণার এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাসন ও মনপুরা শহররক্ষা বাঁধে ১৬৮ কোটি টাকার দুই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আট বছর আগে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব সিসি ব্লক নির্মাণ করা হয়, এর মধ্যে প্রায় এক লাখই ছিল নি¤œমানের। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা শর্ত ভঙ্গ করে খুবই নি¤œমানের এসব ব্লক তৈরি করেন; অথচ তাদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকই। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; উল্টো অনেকের পদোন্নতি হয়েছে।
২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বরের একনেক সভায় ভোলায় চরফ্যাসন ও মনপুরা শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের মূল ডিপিপি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বাস্তবায়নকাল ছিল ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। তিন দফায় প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প এলাকায় অব্যবহৃত ব্লকগুলো ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুনে তৈরি করা হয়। দু’টি প্রকল্পে ২৯টি প্যাকেজ ছিল। এর মধ্যে ১৫টি ছিল ব্লক তৈরি ও ডাম্পিংয়ের কাজ। নদীভাঙন ঠেকাতে দরপত্রে উন্নতমানের ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির শর্ত দেয়া হয়। বাঁধ নির্মাণে যেসব সামগ্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তা বুয়েটে পরীক্ষার পর জানা যায়, সেসব ছিল খুব নি¤œমানের। সার্বিকভাবে কাজের অগ্রগতি ও গুণগতমান অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্লকগুলো বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
জিও ব্যাগ প্লেসিং (নদীর পাড় ব্লক করা) ও ডাম্পিং (ভাঙন ঠেকাতে নদীর গভীরে বালুর বস্তা ও ব্লক ফেলানো) বিষয়ে গরমিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তখন কাজের পরিবেশও ছিল না। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, প্রকল্পকাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিকের মজুরি বহু গুণে বৃদ্ধি পাওয়া, আর্থিক বছরে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ না থাকা, এক প্যাকেজের বরাদ্দ দিয়ে অন্য প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন ও নির্ভরশীলতা, প্রকল্পকাজে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, মাঠপর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, দু’টি প্যাকেজের ঠিকাদার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করা ও ঠিকাদার-কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থার অভাবসহ নানা জটিলতায় এ দু’টি রুগ্ণ প্রকল্পে পরিণত হয়। তখন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করতে গিয়ে স্টক পাইলের ব্লকগুলো বিতর্কিত দু’টি প্যাকেজের ডাম্পিং ও প্লেসিং কাজে ব্যবহার করে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা বাঁধ এলাকায় যেকোনো ধরনের বিপর্যয় দেখা দিলে হুমকির মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বাঁধ।
প্রকল্প দু’টির সুবিধাভোগী বিশাল দু’টি জনপদের মানুষ। তাদের ভিটেমাটি রক্ষায় এ দু’টি প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অতি লোভে নি¤œমানের কাজ করে সরকারের নদীভাঙন রোধের মতো জনকল্যাণকর কর্মে যারা ব্যাঘাত ঘটাতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাহলেই বর্তমান
সরকারের দুর্নীতিবিরোধী যে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা, তার আন্তরিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement