২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে

-

২০১৮ সালে ঢাকা মহানগরীতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে ৫.১৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৮.৪৪ শতাংশ এবং পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছিল ৭.১৭ শতাংশ। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় গত বছর জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার হার ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। এই হিসাব দিয়েছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান জানান, ঢাকা শহরের ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা সার্ভিসের তথ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরের শেষে সহনীয় পর্যায়ে নেমে এলেও ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সব ধরনের চালের গড় মূল্য বেড়েছে ৮.৯১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাবানের, যা গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে মাছের দাম বেড়েছে ১৩.৫০ শতাংশ, শাক-সবজির ৯.৩৮ শতাংশ, চা পাতার ৮.৮৯ শতাংশ, পান-সুপারির ৭.১৮ শতাংশ, তরল দুধের ১০.৩৩ শতাংশ, গরম মসলার ৮ শতাংশ, ডিমের ৭.৭১ শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশী থান কাপড়ের দাম বেড়েছে ১০.৬৪ শতাংশ আর বিদেশী কাপড়ের দাম বেড়েছে ৬.৪৯ শতাংশ, দেশী শাড়ির দাম বেড়েছে ৬.৫৯ শতাংশ আর গেঞ্জি। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ। দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়িভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫.৫ শতাংশ।
ক্যাব বলেছে, দেশী মসুর ডালের দাম কমেছে ১২.৪৩ শতাংশ, আমদানি করা মসুর ডালে কমেছে ১০.৮৪ শতাংশ। দেশে উৎপাদিত রসুনের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২০.৫৩ শতাংশ আর আমদানি করা রসুনের দাম কমেছে ৩২.৩৭ শতাংশ। কাঁচা মরিচের দাম কমেছে ১৫.২৬ শতাংশ। চিনির দাম কমেছে ১১.৭৫ শতাংশ। বেশ কিছু শাক-সবজির দামও নিম্নমুখী ছিল।
জনসংখ্যার বড় অংশ গ্রামে থাকলেও নিজেদের সামর্থ্যরে অভাবে ব্যয়ের সার্বিক চিত্র তুলে আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে রাজধানী শহরের একটি খণ্ডচিত্র।
একটি সংগঠনের যদি সামর্থ্যই না থাকে তাহলে এই খণ্ডচিত্র উপস্থাপনের প্রয়োজন আদৌ ছিল কিনা এমন প্রশ্ন জাগে। জীবনযাত্রার যেসব খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে খাদ্য ও বাসস্থানের পরই রয়েছে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত খাত। এই তিনটি খাতের হিসাব বাদ দিয়ে ক্যাব যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা কতটা গ্রহণযোগ্য, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠবে।
সাংবাদিকেরা শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত খাতে খরচের হিসাব বাদ দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্ধারণ কতটা যৌক্তিক, জানতে চেয়েছেন। প্রতিবেদনের আলাদা অংশে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত নিয়ে মন্তব্য ও সুপারিশ করেছে ক্যাব।’ ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ওই পত্রিকাকে বলেছেন, ‘শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াতের ব্যয়টা জীবনযাত্রার ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘খাদ্যবহির্ভূত সেবা বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে যদি জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করা হয় তবে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে না। কারণ ২০১৮ সালে এগুলোতে ব্যয় বেড়েছে। তাই যদি মূল হিসাবে এগুলো আনা হতো তবে জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেশি দেখা যেত।’ আরো একটি গুরুতর অসম্পূর্ণতা আছে ক্যাবের এই প্রতিবেদনের। সেটা হলো, এতে গ্রামীণ জীবনযাত্রার চিত্র পুরোপুরিই অনুপস্থিত। তাদের বাদ দিয়ে শুধু রাজধানীর জীবনযাত্রার এই চিত্র কতটা গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।
খণ্ডিত তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় জীবনের যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে গেলে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি হবে। দেশে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের জরিপ বা সমীক্ষার তথ্যের ওপর আস্থা রাখা বর্তমানে কঠিন। পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক বা মন্ত্রণালয়ের অনেক হিসাবেও গরমিল দেখা যায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হিসাব সরকার দেয় সে সম্পর্কেও বিশেষজ্ঞদের বলতে দেখা গেছে যে, বিদ্যমান বাস্তবতা এটা সমর্থন করে না।
ক্যাব রাজধানীর মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক সম্প্রসারণ হলেও সেবার মান আগের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল। আমরাও এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের তরফ থেকে আশু পদক্ষেপ আশা করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement