২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নো ম্যানস ল্যান্ডে মিয়ানমারের কনক্রিট কাঠামো

আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন

-

আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে কনক্রিটের কাঠামো তৈরি করে চলেছে। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলকায় এই কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এই কাঠামো এ এলাকার খালের পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। এর ফলে এ এলাকায় বন্যা দেখা দেবে। এর ফলে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের এ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়ে এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ওই স্থানে বসবাস করে আসছিল। রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ওই কনক্রিট কাঠামোকে তাদের পেট্রলিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
কক্সবাজারের ডিসি কামাল আহমেদ গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ওই নির্মাণকাজ ও এর পরিণতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কামাল আহমেদ একটি ইংরেজি দৈনিককে বলেছেন, মিয়ানমার নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনো কাঠামো তৈরি করতে পারে না। যদি ওই কাঠামো নির্মিত হয়, তাহলে নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কারণ, পুরো এলাকাটি তখন পানির নিচে তলিয়ে যাবে। অপর দিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, কোনো দেশই প্রতিবেশী দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছাড়া সীমান্তে কোনো নির্মাণকাজ চালাতে পারে না। মিয়ানমার যা করতে যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনো দেশ সীমান্তের উভয় পাশের ১৫০ গজের ভেতর কোনো নির্মাণকাজ চালাতে পারবে না। তা করতে হলে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হতে হবে। রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ, ওই কাঠামো নির্মিত হলে তাদের কৃষিজমি ও নো ম্যানস ল্যান্ডের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে।
ওই কাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানাতে হবে। প্রাথমিকভাবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে তা বন্ধের প্রয়াস চালাতে হবে। এরপরও যদি মিয়ানমার এ কাজে বিরত না থাকে, তবে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলতে হবে। যেহেতু আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দুই দেশের সম্মতি ছাড়া নিষিদ্ধ, তাই আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা এর নিশ্চিত প্রতিকার পাওয়ার আশা করতে পারি। আমরা শান্তিপূর্ণ জাতি হিসেবে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, তেমনি চাই রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সুরাহা।
এ দিকে গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে জানা গেছে, আবারো রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। রাখাইনে সেনা অভিযানের ফলে প্রাণভয়ে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এবার সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। আরাকান আর্মির হামলার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে। বৌদ্ধ বিদ্রোহী আরাকান আর্মির হামলার ফলে সীমান্তে মিয়ানমার সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে। এর ফলে দেশটির নাগরিকদের দেশ ছেড়ে পালানোর সমস্যাটি আরো জটিল আকার ধারণ করছে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীসহ রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এ দিকে আমরা আরো খবর পাচ্ছি, ভারত থেকে রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুললে চলবে না, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের এক সমস্যা। এ সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন থাকার সুযোগও আমাদের জন্য অবশেষ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement