১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
  খেলাপি ঋণ আদায় সমস্যা

প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে

-

খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসায়, আরো বৃহত্তর পরিসর বিবেচনায় স্থায়ী আসন গেড়ে বসে আছে। সরকার আসে সরকার যায়, খেলাপি ঋণসমস্যা অবসানের নানামাত্রিক প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়। অর্থমন্ত্রীরা যখন দায়িত্বে আসেন নতুন এসব প্রতিশ্রুতির নবায়ন হয়। বলা হয়, যেকোনো মূল্যে ঋণখেলাপি সংস্কৃতির অবসান ঘটানো হবে; কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীকেও নেতিয়ে পড়তে দেখা যায়। বলা হয়, এই কারণে ওই কারণে ঋণখেলাপি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বা করা যাচ্ছে না। ফলে দেখা যায়, সময়ের সাথে ঋণখেলাপি সমস্যার তীব্রতা শুধু বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে নয়া অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণখেলাপি সমস্যা সমাধান করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। যদি তাই হয়, তবে যথাসম্ভব দ্রুত প্রয়োজনীয় সে আইন বা আইনগুলো করতে হবে। বর্তমানে যে সংসদকাঠামো, তাতে সরকার চাইলেই অতি সহজে সে আইন প্রণয়ন করতে পারবে। তা ছাড়া, দেশের সাধারণ মানুষও চায় ঋণখেলাপি সংস্কৃতি বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন হোক। আইনটি হওয়া দরকার এমন, যাতে ঋণখেলাপিরা সে আইনের ফাঁক গলাতে না পারে। নতুন অর্থমন্ত্রী যেহেতু গত পরশু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে বৈঠকে বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন সংশোধন করা হবে; সেহেতু আমরা আশাবাদী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা আইনগুলো প্রণয়ন করে অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অপরিশোধিত ঋণের অর্থ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্তের কথা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার মধ্যে আছেÑ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। ১৯৭২ সাল থেকে এ আইনের সব ধারা ও উপধারার দুর্বলতা শনাক্ত করে এর সংশোধনী আনা হবে। এ ছাড়া ইতঃপূর্বে অবলোপন (রাইট অফ) করা ঋণ পর্যালোচনা করতে গঠন করা হবে শক্তিশালী একটি কমিটি। ওই কমিটি প্রতিটি ঋণের ঘটনা আলাদা আলাদাভাবে পর্যালোচনা করবে এবং এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। সিদ্ধান্তগুলো ইতিবাচক।
ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলোর সাথে ক্ষমতাসীনদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট। এ অভিযোগ আমরা অতীতে বহুবার শুনেছি। এ অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা-ও আমাদের জানা। এ কারণে প্রতিটি সরকারের আমলেই ঋণখেলাপি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যায়নি। আমরা আশা করব, নতুন অর্থমন্ত্রী এবার ঋণখেলাপি অবসানের বিভিন্ন পদক্ষেপে সে উপসর্গের বিষয়টি সচেতনভাবে মনে রাখবেন। নতুবা তার এই অভিযান আগের মতোই ব্যর্থ হতে বাধ্য। এ সতর্ক বার্তাটি নতুন অর্থমন্ত্রীকে আমরা জানিয়ে রাখতে চাই।
নতুন অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপি সমস্যাকে আর্থিক খাতের একটি বড় মাপের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে মনে হয়। আমরা আশা করব, তার হাতেই এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে। দেশের সচেতন মানুষ তেমনটিই চায়।


আরো সংবাদ



premium cement