২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সরকারি স্কুলে অসম ভর্তিযুদ্ধ

শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে

-

বাংলাদেশে শিশুদের পড়াশোনা জটিল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। যেই সময়ে একটি সহজ সরল ও সাধারণ জীবন হবে, তখন শিশুদের মাথায় রীতিমতো কঠিন বোঝা চেপে বসছে। অন্য দিকে অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুলে দিতে জটিল সমস্যায় পড়ছেন। শিশুদের পাঠ্যবিষয় কী হবে, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। বিভিন্ন ধরনের স্কুল-মাদরাসা গড়ে উঠেছে। সাধারণত অভিভাবকেরা সরকারি স্কুলগুলোর দিকে ছোটেন। সেখানে চলছে এক অসম প্রতিযোগিতা। সরকারি চার শতাধিক স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভর্তি নিয়ে অভিভাবকেরা এখন হিমশিম খাচ্ছেন।
সরকারি স্কুলগুলোতে দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার পর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হবে। লটারির মাধ্যমে ২০ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণীর জন্য শিশুদের বাছাই করা হবে। রাজধানীতে ১৭টি সরকারি স্কুলে ১৯৬০ জনকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হবে। এর বিপরীতে আবেদন পড়েছে ২২ হাজার ১৭৯টি। একটি আসনের বিপরীতে ১২টি শিশু আবেদন করেছে। রাজধানীর মোট ৪১টি সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীতে ১২ হাজার ৩৬৬টি ফাঁকা আসনে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। সেখানেও প্রতিটি আসনের বিপরীতে সাতজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মানুষের মৌলিক যেসব চাহিদা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র জোগান দেবে, তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আমাদের দেশে শিক্ষার যে অবস্থা, তাতে মনে হয় রাষ্ট্র এমন চাহিদার জোগান দিতে পারছে না। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান ছাত্র পাচ্ছে না। এ অবস্থায় কোমলমতি শিশুদের কেন এমন কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। সরকারি স্কুলে আসন স্বল্পতার কারণে বেশির ভাগ আগ্রহী শিশু বাদ পড়ছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে সরকারি নামকরা স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য চলে এমন প্রতিযোগিতা। এখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় বাদ পড়ে। জীবনের শুরুতে এ ধরনের ব্যর্থতা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর অসম প্রতিযোগিতার সুযোগে শুরু হয়েছে কোচিং বাণিজ্য। সরকারি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য চলে এই কোচিং। কোচিং সেন্টারগুলোতে নিজেদের সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের দৌড়ঝাঁপে কষ্টের সীমা থাকে না। আবার এই কোচিং সেন্টারগুলো হয়ে ওঠে দুর্নীতির আখড়া। সেখানে কিভাবে অবৈধভাবে ভর্তি করানো যেতে পারে তার ফন্দিও চলে। এ সবকিছু সরকারের চোখের সামনে প্রকাশ্যে চলে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে শিক্ষার নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। অন্য দিকে বেসরকারি স্কুল-মাদরাসা গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগের মানসম্মত শিক্ষার আয়োজন নেই। উপযুক্ত শিক্ষক নেই। ফলে অভিভাবকেরা সরকারি স্কুলের দিকে তাদের সন্তানদের নিয়ে দৌড়ান।
বেসরকারি কিছু স্কুল রয়েছে, যেখানে অপেক্ষাকৃত ভালো পাঠ দেয়া হয়। সেসব স্কুলের দিকেও অভিভাবকেরা ছোটেন। তবে সরকারি স্কুল এবং বেসরকারি নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামই ব্যবহার হচ্ছে এখন বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের নামের কারণে সেখানে বেশির ভাগ শিশু ভর্তি হতে চায়। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান আগের মতো নেই। এই সুযোগে ওই স্কুলগুলো অনেক বেশি ছাত্র ভর্তি করিয়ে নেয়। বেশি ছাত্রকে ভালো পাঠ দেয়া হবে, এমনটি আর হয় না। বরং বেশি বেশি ছাত্র শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ করে দেয়। শ্রেণিকক্ষে সেভাবে পাঠদান হয় না। বাংলাদেশের শিক্ষা একটি ব্যবসায়ী চক্রের হাতে পড়ে গেছে। এই চক্র থেকে বের করার জন্য কোনো চেষ্টা-প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। ফলে কোমলমতি শিশুদের পাঠদানের চেয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই চলছে অসম ভর্তিযুদ্ধ।


আরো সংবাদ



premium cement