২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জরিপের নামে সরকারের হাতে মানুষের মুঠোফোন নম্বর

এভাবে গোপনীয় বিষয় সংগ্রহ করা যায় না

-

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সাত কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর নম্বর সংগ্রহ করেছে। তাদের অনুমতি ছাড়াই ঠিক জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘জরিপের’ নামে এসব নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। সহযোগী সংবাদপত্রের ভাষ্যে জানা যাচ্ছেÑ মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে এসব নম্বর চেয়ে সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। পরে বিদ্যুৎ জরিপের কথা বলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সব অপারেটরকে চিঠি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এসব নম্বর সংগ্রহ করে। দেশে এখনো ডাটা সংরক্ষণ অধিকার আইন নেই। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মোবাইল কোম্পানি গ্রাহকদের তথ্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে না। তবে আদালতের নির্দেশে জাতীয় নিরাপত্তা এবং গণ-আদেশ অনুযায়ী সেটা করা যেতে পারে। গ্রাহকদের নম্বর বিভিন্ন সংস্থার হাতে চলে যাওয়ায় এখন নানাভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
খবরে জানা যায়, বিটিআরসি ৪ ডিসেম্বর এ চিঠি দিয়ে ১০ ডিসেম্বর নম্বর নেয়। চিঠির শিরোনাম ছিল ‘উপজেলাভিত্তিক মুঠোফোন নম্বরের ডেটা সেট প্রদান প্রসঙ্গে’। এতে বলা হয় সব নেটওয়ার্ক অপারেটরকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎবিষয়ক জরিপের প্রয়োজনে সংযুক্ত উপজেলার মুঠোফোন নম্বরের ডেটা সেট কমিশন বরাবর সফট কপি আকারে অতিসত্বর পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ দিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছেÑ তারা এ ধরনের কোনো তথ্য চায়নি। এ ব্যাপারে সহযোগী একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এত বিপুল নম্বর চেয়েছে কি না জানতে চাইলে সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তারা বরং পরামর্শ দিয়েছে এ ব্যাপারে বিটিআরসির কাছে নিশ্চিত করে জানতে। এর পেছনের ঘটনা হচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক বার্তা ও সেøাগান গ্রাহকদের মুঠোফোনে পাঠাতে অপারেটরগুলোকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। আইনে অনুমতি দেয় না বলে এসব বার্তা পাঠাতে তখন তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। বিদ্যুৎবিষয়ক যে জরিপের কথা বলা হচ্ছে, এর আগে সেই ধরনের জরিপে ২০ হাজার মানুষের তথ্যকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর জরিপটি করেছিল বিবিএস। এবারে জরিপের নামে তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তার বক্তব্য হচ্ছে, প্রতি বছর শীতকালে বিদ্যুৎগ্রহীতাদের ওপর একটি জরিপ করা হয়। এবারো করা হচ্ছে। জরিপটি বিবিএস করবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জরিপ প্রতি বছর আমার নেতৃত্বে করা হয়। অতীতে কমসংখ্যক নমুনা নিয়ে জরিপ করা হয়েছে। এতে দেশের মানুষের ভাবনার যথাযথ প্রতিফলন কম ঘটে। সে কারণেই এবার বেশিসংখ্যক মানুষকে জরিপের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি।’ বিস্ময়কর ব্যাপার হলোÑ বিবিএসের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে এ ধরনের জরিপ তারা করছেন বলে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। বিবিএসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়ার মতো বক্তব্য পত্রিকাটি পায়নি।
বিদ্যুতের গ্রাহক জরিপের জন্য মোবাাইল ফোন গ্রাহকের নম্বর লাগবে, এমনটা স্বাভাবিক নয়। জরিপের নমুনা হিসেবে তারা মোবাইল ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করতে চাইলেও সব ব্যবহারকারীর নম্বর প্রয়োজন হতে পারে না। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা যে যুক্তি দেখিয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মুঠোফোন নম্বরের সাথে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি জড়িত। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এভাবে মানুষের মতামত ছাড়া কোনো সংস্থা তাদের নম্বর সংগ্রহ করে নিতে পারে না। এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement