২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অনিয়ম ও ঘুষের আখড়া ভূমি অফিস

স্বচ্ছতা ও জটিলতা মুক্ত করা প্রয়োজন

-

দেশের সব ভূমি অফিসেই কম-বেশি দুর্নীতি হয়। তবে কোনো কোনো ভূমি অফিসের ঘুষবাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এলাকাবাসী। ভূমি অফিস মানে ঘুষের স্বর্গরাজ্য। মানুষের নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে ভূমির সাথে, ভূমি না হলে মানুষ অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচতে পারে না। তাই ভূমি অফিস মানে কোনো-না-কোনোভাবে প্রতিটি মানুষের সম্পর্ক রয়েছে কিংবা থাকতে হয়।
খাজনা থেকে বাজনা বেশিÑ এটি একটি প্রবচন বা প্রবাদ বাক্যে রূপান্তরিত হয়েছে। ভূমি হস্তান্তর করতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। নামজারি করতে লাগে অনেক টাকা। জমি ক্রয়-বিক্রয় করার সময় টাকা লাগে। জমি রেজেস্ট্রি করতে অনেক টাকার ব্যাপার। দাগ নম্বর খতিয়ান নামজারি সব ক্ষেত্রে টাকা না দিলে কাজ হয় না। করণিক ভুল সংশোধন করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। এভাবে জায়গা-জমিন নিয়ে হরেক বিপত্তি সৃষ্টি হয়। সেসব ঝামেলায় একবার পড়লে অনেকের বয়স শেষ হয়ে যায়।
জমি-জিরাত নিয়ে কোনোভাবে মামলায় পড়লে তার আর ভোগান্তির শেষ থাকে না। টাকার তো শেষ নেই। ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। খারিজের নামে একজন খাজনাদাতা যে কী পরিমাণ ভোগান্তিতে পড়েনÑ তার কোনো ইয়াত্তা নেই। বিশেষত খাজনা খারিজ, ডিসিআর পরিশোধ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নামে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েও রেহাই পাচ্ছেন নাÑ এমন নজির ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের এক ভুক্তভোগীর খবর জাতীয় দৈনিকের খবরের মর্যাদা পেয়েছে।
ভূমি খারিজের নামে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ একজন কর্মচারী। এ ছাড়া নামজারি ও খাজনা আদায়ের নাম করে পর্চা তল্লাশি ও কাগজপত্র খুঁজতেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঘুষ ছাড়া নামজারি হয় না। তা ছাড়া একজনের জমি অন্যজনের নামে দেখানো, দাগ নম্বর পরিবর্তন করা একটা সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে।
জায়গা-জমিন এমনিতেই স্পর্শকাতর বিষয়। অথচ এই স্পর্শকাতরতার সুযোটাই নিচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। অপর দিকে এখানে দুর্নীতির সুযোগ এত বেশি যে সাধারণ মানুষ এসব বিষয় নিয়ে বেশি বুঝতে পারে না। তা ছাড়া একজনের জমিন অন্যজনকে পাইয়ে দেয়ার মতো পুকুর চুরির ঘটনাও এখানে হয়। এক জমিন কয়েকবার বিক্রি হয়। তাই প্রকৃত মালিক একসময় জমিনের ওপর অধিকার হারায়। ভুয়া দলিল করে অন্যজনকে সেই জমিন ভোগদখলের সুযোগ করে দেয়া হয়।
ভুঁইসম্পত্তি এমনিতেই জটিল বিষয়। কোনো মানুষ বাধ্য না হলে এ পথে পা মাড়াতে চায় না। তার পরও কোনো কারণে একবার ভূমি অফিসে পা পড়লে তার ভোগান্তির শেষ থাকে না। মামলা-মোকদ্দমা থেকে শুরু করে শত শত টাকা যেমন খরচ করতে হয়, তেমনি হয়রানিরও শেষ থাকে না।
আমরা ভূমি অফিসের অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের একটা সুরাহা কামনা করি। একই সাথে ভূমিসংক্রান্ত কাগজপত্রের স্বচ্ছতার একটা ব্যবস্থা করা জরুরি। স্বচ্ছতার অভাবেই দুর্নীতির সুযোগ বেড়েছে। তাই ভূমি নীতিতে এমন পরিবর্তন আনার ব্যবস্থার সুপারিশ করছি, যাতে বিষয়টি জটিলতামুক্ত হয়, জনগণ সহজেই কাজ করার সুযোগ পাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement