২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জলবায়ু ও প্রাণিকুল বিলুপ্তির শঙ্কা

শিক্ষা নিচ্ছে না মানবজাতি

-

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আশঙ্কাজনক পূর্বাভাষ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষ শিল্পায়ন ও গৃহস্থালি কাজে যে উচ্চহারে জ্বালানি ব্যবহার করছে তা দ্রুত পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় অল্প সময়ের মধ্যে প্রাণিজগতের একটি বড় অংশ বিলুপ্তির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে বলে বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনগুলো বলছে। আর মানুষও এর ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে পড়ে নানাভাবে আক্রান্ত হবে বলে তারা অনুমান করছে। এবার একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রাণী বিলুপ্তির একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকদের মতে, এটি ঘটেছিল ২৫ কোটি ২০ লাখ বছর আগে। এত আগে ঘটা বিশ্বব্যাপী একটা ধ্বংসাত্মক ঘটনার ব্যাপারে গবেষকেরা কিভাবে অনুমান করলেন সেটা একটা প্রশ্ন। তবে সেই প্রতিবেদনে প্রাণী বিলুপ্তির যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেটা ভাবনার বিষয় হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২৫ কোটি ২০ লাখ বছর আগে ভূমিতে বসবাসকারী ৭০ শতাংশ এবং পানিতে বসবাসকারী ৯৬ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের মতে, গত ৫০ কোটি বছরে পৃথিবীর প্রাণিজগতে বিলুপ্তির এটা ছিল সবচেয়ে খারাপ ঘটনা। ‘সময়’ নিয়ে গবেষকেরা যে মন্তব্য করেছেন সেটা প্রমাণ করার সুযোগ কম হলে আশঙ্কার দিকটি আমলে নিতে হবে। বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট প্রাণী বিলুপ্তির সময়টিকে তারা পারমিয়ান যুগ বলছেন। ‘দ্য গ্রেট ডাইয়িং’ নামে একটা বিশাল ধরনের এবং বিপরীতধর্মী বিবর্তন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। তাদের মতে, প্রাণিজগৎ বিলুপ্তির ওই ঘটনা ঘটেছিল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে। থেমে থেমে ওই বিশালকার অগ্নু্যুৎপাত বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। উষ্ণতার কারণে মহাসাগরের অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়েছিল এবং প্রাণিজগৎ দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। গবেষকেরা সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে গরম পানি ও কম অক্সিজেনের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে ‘গ্রেট ডাইয়িংয়ের’ বিষয়টি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তাদের মতে, উষ্ণতা ও অক্সিজেনের মধ্যে সম্পর্ক যদি ঠিক হয় তাহলে পৃথিবীতে এমন পরিবেশ এখনো বিরাজ করছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন বেড়ে যায়। ফলে দ্রুত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জীববৈচিত্র্যে এর প্রভাব পড়ে। আর এখন তুলনামূলক খুব কম সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা ঘটে চলছে। বর্তমানে মানুষের সৃষ্ট গ্রিন হাউজ গ্যাসের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ আজকে যা করছে শেষ পর্যন্ত গণহারে বিলুপ্তিতেই এর পরিবর্তন ঘটবে। গবেষকেরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে চলতে দিলে আমাদের রাস্তার শেষ কোথায় গবেষণাটি সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে দিলে আরো অনেক কিছুই আমরা হারাব। যে প্রজাতি হারিয়ে যাবে এগুলোকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। বিজ্ঞানীরা মহাসাগরে অক্সিজেন হ্রাস পাওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন যা পারমিয়ান যুগের সাথে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর কীটপতঙ্গের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদি জলবায়ু পরিবর্তন এভাবেই চলতে থাকে তাহলে পৃথিবীর প্রাণিজগতে আবারো বিলুপ্তির ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ধরনের গবেষণা প্রতিবেদন অনেক বেশি অনুমান নির্ভর হলেও সতর্কতার দিকটি তাৎপর্যপূর্ণ। দ্রুত উষ্ণ হয়ে ওঠা বৈশ্বিক আবহাওয়ার ফলাফল মানবজাতি ইতোমধ্যে ভোগ করছে। উষ্ণতা বাড়ার যে গতি সেটা কমানোর কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। মানুষ শিল্পায়ন এবং নিজেদের আরাম আয়েশকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জলবায়ুর কি হবে সেটা নিয়ে তারা ভাবছে না। বিশ্ব প্রাণিকুল ও মানবকুলের ভালো চাইলে এ ধরনের অপরিণামদর্শী আচরণ থেকে মানবতাকে ফিরতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement