২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইসির পক্ষপাতিত্ব

প্রার্থিতা বাছাইয়েও অব্যাহত রয়েছে

-

ইসি কারো প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব করবে না। সব দলের প্রতি সমান সুযোগ সৃষ্টি করে নির্বাচনকে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলবে এটাই ইসির মুখ্য দায়িত্ব। কিন্তু তা করতে বর্তমান ইসিকে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হতে দেখা গেছে নানা ক্ষেত্রে। প্রথমত সরকারি দলের বাইরে সব দলেরই মোটামুটি দাবি নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণ করতে ইসি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপর দিকে, সরকারবিরোধীদের অন্যতম দাবি ছিল, আগামী নির্বাচন যাতে সব দল সমানভাবে অংশ নিতে পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচনের সময় হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার বন্ধ ও কারাগারে থাকাদের জামিনে ইসিকে ভূমিকা রাখতে হবে। তা ছাড়া নতুন নতুন গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সিইসি তাতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে নির্বাচনের এই সময়টায়ও দেখা যাচ্ছেÑ ঢাকার হাইকোর্ট অঙ্গন থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার জর্জ কোর্ট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসহ সারা দেশে জেলাপর্যায়ের আদালতের আঙিনায় ‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই’ অবস্থা। কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীরাও জামিনের আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন, কোথাও কর্মীরা জামিনের আবেদন করছেন আদালতে, কোথাও গ্রেফতার ঠেকাতে আগাম জামিনের আবেদন, কোথাও স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে পুলিশি গ্রেফতার ঠেকাতে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে। কোর্ট-কাচারিগুলোয় হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতির নজিরবিহীন এমন দৃশ্য অতীতের আর কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। ইসির নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্বের কারণেই এমনটি ঘটছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এখন জাতীয় দাবি হলেও ইসির কাছে এর কোনো মূল্য আছে বলে মনে হয় না। অথচ জনগণের ভোটের অধিকারের দাবি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসঙ্ঘ, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এই দাবি উঠেছে। প্রভাবশালী দেশ, সংস্থা এবং ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকেরাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিশ্বরাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন এমন প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের সাথে বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং আগামীতে বন্ধুত্ব থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার ওপর। অথচ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ক্রমেই পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে চলেছে। এমনকি প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তা স্পষ্টত দৃশ্যমান। সারা দেশে যারা ভোট গ্রহণ করবেন সেই ডিসি, এসপি এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির নির্দেশনা তো দেয়ইনি, উল্টো তাদের পক্ষপাতিত্বের দিকে উসকে দিয়েছে ইসি।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে নজিরবিহীন তুঘলকি কাণ্ড করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তারা। সামান্য ত্রুটির জন্য কারো প্রার্থিতা বাতিল করা হলেও গুরুতর অভিযোগের পরও অনেকের মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। একই অপরাধ তথা ঋণখেলাপি হওয়ায় কিছু মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়, অপর দিকে কিছু মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। এমনকি একই ব্যক্তি ঢাকায় ও ফেনীতে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে এক জায়গায় তার মনোনয়ন বৈধ ও অপর জায়গায় অবৈধ হয়েছে।
এ ধরনের অনেক তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে এই নির্বাচন কমিশন। ইসির এই নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব আগামী গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে কোথায় নিয়ে যায় তাই এখন ভাবার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement