২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বৈদেশিক সহায়তা কাটছাঁট শুরু হচ্ছে

সুষ্ঠু নির্বাচনই এর সমাধান

-

চলতি অর্থবছরের মাত্র পাঁচ মাস পার না হতেই বাংলাদেশকে প্রদত্ত বৈদেশিক সহায়তা কাটছাঁট করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে কত বরাদ্দ থাকবে, তা নির্ধারণের জন্য ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর বৈঠকে বসছে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে আরো জানানো হয়েছে, গুরুত্ববহ ওই বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসলে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘ধাক্কা’ লাগছে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
জানা গেছে, বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় এর মধ্যেই হ্রাস পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে কমে যেতে পারে সংশোধিত এডিপিতে বেশ বড় অঙ্কের বিদেশী সহায়তা, এমনটিই অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, দু’টি ফ্যাক্টর এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য। একটি হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়া এবং অন্যটি হলো প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল যারা, তারা কতটা জড়িত হবেন এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ায়। তিনি বলেছেন, যদি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষাবধি অশান্তি দেখা দেয়, তার মাত্রা কতটা হবে কিংবা এর স্থায়িত্বকাল কতখানিÑ এর ওপর প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ভর করছে। বড় প্রকল্পের দায়িত্ব যাদের, তারা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হলে প্রকল্পের দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন না। ড. জাহিদের মতে, ওই দু’টি বিষয় যথাযথ না হলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমে যাবে। এর ফলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেশি কমার আশঙ্কা রয়ে যায়। এ অবস্থায় মেগা প্রজেক্টে যারা জড়িত, তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেয়াই উচিত; বরং মনোযোগসহ প্রকল্পের কাজ করে যেতে বলা প্রয়োজন।
জানা যায়, গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ভিত্তিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পকেন্দ্রিক বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ নির্ধারিত হবে। এ ব্যাপারে, ১৯ ও ২০ তারিখের বৈঠককে ইআরডি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকলে পরে কোনো আপত্তি বিবেচনা করা হবে না। বিআইডিএসের সাবেক ডিজি অর্থনীতিবিদ মোস্তফা মুজেরি বলেছেন, নির্বাচনকালে প্রকল্প বাস্তবায়ন মন্থর হয়ে যায়। এ কারণে সংশোধিত এডিপিতে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ কমে যেতে পারে। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি কতটা স্বাভাবিক থাকবে, এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যত শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তত তাড়াতাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ফিরে আসবে। এ দিকে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও ব্যয় করতে না পারায় এডিপি থেকে বাদ পড়েছে চার হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ব্যয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাড়লেও এডিপি বাস্তবায়নের হার হ্রাস পেয়েছে। অপর দিকে, আইএমইডির সদ্য বিগত সচিব এবং ইআরডির বর্তমান সচিবের দাবিÑ ‘নির্বাচনের প্রভাব এ ক্ষেত্রে পড়ছে না।’
বৈদেশিক সাহায্য-সহায়তা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কত বেশি অপরিহার্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সংসদ নির্বাচনের কারণে এই রবাদ্দ বিঘিœত না হোকÑ এটাই সবার কাম্য। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে এর পরবর্তী পরিস্থিতি থাকবে স্বাভাবিক। তখন বৈদেশিক সহায়তার গতি থাকবে আগের মতোই। অন্যথায় এই সহায়তা অনেক হ্রাস পাবে এবং দেশ ও জাতি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আসন্ন নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ, তথা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়; সে জন্য সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement