২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নির্বাচনকে সামনে রেখে নিখোঁজ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকছে দায়হীন

-

গুম খুন অপহরণ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি সরকারের দুই মেয়াদে এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। কখনো কখনো এতটাই বেড়েছে যে, সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে। অর্থাৎ ঘটনার শিকার ব্যক্তি সাধারণত বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য কিংবা তার সাথে সংশ্লিষ্ট, এমন দেখা যায়। তুলে নেয়ার ঘটনা এখন নতুন করে শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের ঘটনা শুরু হওয়ায় এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক, রাজনৈতিক কারণে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে তুলে নেয়া হচ্ছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একের পর এক তুলে নেয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই এ অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। তিন দিনে পাঁচজনকে এভাবে তুলে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার কাজ করছিলেন। পরে কারওয়ান বাজার থেকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আইনজীবীর পোশাক পরা অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে একটি গাড়িতে ওঠায়। এরপর যোবায়েরকে তার কাকরাইলের চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নিচে রেখে ডিবি পরিচয়দানকারী ওই লোকদের কয়েকজন ওপরে যোবায়েরের চেম্বারে যায়। চেম্বারে থাকা বশির নামে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর বেলা ২টার দিকে তাদের দুইজনকে নিয়ে চলে যায়। যোবায়েরের বোন ডা: ফেরদৌসী জানিয়েছেন, যারা তুলে নিয়ে গেছে তাদের একজন নিজেকে ডিবির এসি শাহাদাত বলে পরিচয় দেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় নিউমার্কেট এলাকা থেকে কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে তুলে নেয়ার খবর পাওয়া যায়। নিউমার্কেটে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। ২৯ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা থেকে খন্দকার রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়া হয় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে। রুহুল আমিন জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা যায়। তাকে তুলে নেয়ার দৃশ্য কর্মস্থলের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সেখানে কয়েকজনের চেহারা স্পষ্ট দেখা গেছে। রুহুল আমিনের স্ত্রী জানিয়েছেন, ২৯ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার স্বামীকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেছে। যারা নিয়ে গেছে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়েছে। এ দিকে একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছে, অন্য দিকে বিভিন্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় এক বিএনপি নেতার লাশ। যশোরের কেশবপুরের বিএনপির ওই নেতা আবু বকর সিদ্দিক (৬৫) ঢাকায় এসেছিলেন দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য। তিনি গত ১৮ নভেম্বর হোটেল থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও কারা আবু বকরকে তুলে নিয়ে হত্যা করে, তা জানাতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটার পর অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ তৎপর হওয়ার কথা। সেখানে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম আসছে এ ধরনের গুম অপহরণ ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সাথে। কোন বাহিনী এ কাজ করেছে তার নাম আসছে, এমনকি কর্মকর্তাদের নামও আসছে। দুঃখজনক হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান বরাবরের মতো। নিজেরা অভিযুক্ত হওয়ার পরও কোনো ধরনের তদন্তের আয়োজন করছে, তা দেখা যায় না। লাশ পাওয়া যাচ্ছে নদী ও খালবিলে। প্রতিটি ঘটনা মানুষের কাছে প্রশ্ন হিসেবে থেকে যাচ্ছে। কখনো কি এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে?


আরো সংবাদ



premium cement