২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইসি কেন সব ক্ষেত্রে অসহায়?

-

জাতীয় সংসদ বহাল থাকার কারণে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের দাপট নির্বাচনের প্রাক্কালে একটুও কমেনি। আবার দলীয় প্রভাবশালী মহলও যার যার এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে থাকার চেষ্টা করছে। এর বাইরে দলীয় সুবিধাভোগীরাও অন্যায়ভাবে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলীয় ক্যাডারদের ব্যাপারে শুধু নির্লিপ্ত নয়, তাদের সমীহ করে চলার মধ্যেই তারা তাদের রাজনৈতিক সুবিধা ভোগের সুযোগ খুঁজছে। এর বাইরে আছে বৈধ অস্ত্রধারীদের অবৈধ দাপট, তার সাথে যোগ হয়েছে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। তারা শুধু তাণ্ডব দেখিয়ে যাচ্ছে নাÑ এলাকার একক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য বিরোধী দল ভিন্নমতের মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে চলেছে। তারা ধরেই নিয়েছে, নর্বাচন কমিশন বা ইসি সক্ষম ও দলনিরপেক্ষ অবস্থান নেয়ার মতো অবস্থানে নেই। কারণ তাদের ওপর সরকার তথা প্রশাসনের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য চাপ রয়েছে। তা ছাড়া, পুলিশ এখন পর্যন্ত কোথাও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে দু-একটি নজির সৃষ্টি করেনি, যাতে ভিন্নমতের মানুষ কিংবা বিরোধীদলীয় কর্মী, নেতা ও সমর্থকেরা সামান্য স্বস্তি পেতে পারেন। অনেক এলাকায় বিরোধীদলীয় কর্মীরা ঘরছাড়া, অনেকেই মামলা মাথায় করে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চিরুনি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্রধারীসহ সন্ত্রাসী চক্রকে ধরে আইনের আওতায় নেয়ার দৃষ্টান্ত মেলে না।
মোটকথা নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টির এতটুকু দায়িত্ব পালন করার গরজ বোধ করা হয়নি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা তো অনেক দূরের কথা। আমাদের জানা মতে, ইসি এখনো কারো ওপর আইনি কর্তৃত্বের হাত প্রসারিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। যাওবা মাঝে মধ্যে নীতিকথা বলে নিজেদের কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করছে, তার কোনো সুফল এখনো দেখা যায়নি। যদিও সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তবে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির যে প্রাথমিক কাজগুলো করতে হয়, সেগুলো নিয়েও ইসি এখনো ভাবছে বলে মনে হয় না। ইসি লোকদেখানো খবরদারি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথাও নিজের সাংবিধানিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কেন, এ প্রশ্ন দেশবাসীর।
স্বাভাবিকভাবেই ইসির পদত্যাগের দাবি উঠেছে। সিইসির যোগ্যতা ও দায়িত্ববোধের ব্যাপারে বিরোধী দল সংশয় প্রকাশ করে তার পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করছে। তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যেই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে অশোভন ও অসঙ্গত মন্তব্য করা হয়েছে। ইসি এখনো বুঝতে সক্ষম নয়, একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা ও পর্যবেক্ষণ কত বেশি জরুরি।
রাজনীতিবিদেরা কী বললেন, না বললেন সেসব বিষয় ইসির জবাব দেয়ার ব্যাপার নয়। আমরা মনে করি, ইসি এই সিইসির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে রয়ে গেছে এখনো একেবারে আনকোরা। দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে অস্ত্রবাজ-সন্ত্রাসীরা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে।
সেই ধরনের অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না চাইলে এখনই ইসিকে সাহসী ও নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ এবং সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement