২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই

এর ফলাফল ভালো হবে না

-

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, এ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এক দিকে দলীয় সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের প্রভাব দৃশ্যমান। অন্য দিকে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন আগের মতো অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বিরোধী সম্ভাব্য প্রার্থীর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রার্থী হতে পারেন, এমন অনেকে পুলিশি হয়রানির মধ্যে রয়েছেন। অনেকে যাচ্ছেন কারাগারে। বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের হয়রানি এমন পর্যায়ে তারা কি নির্বাচন করবেন, নাকি জামিন নেবেন, নাকি জেলে যাবেনÑ এমন মন্তব্য করছেন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে অনেকে। এ অবস্থায় অনেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সেমিনার থেকে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
দেশে নির্বাচনের একটা আবহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধীরা একটি জোট গঠন করে এগিয়ে এলে এমন আবহ তৈরি হয়। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা সরকারের সাথে কিছু দরকষাকষি করেছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আবদার-আরজি শোনা হয়েছে; কিন্তু সেভাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়া হয়নি। এরপরও স¤পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সিজিএস আয়োজিত সেমিনারে অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, ‘পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসন রাজনৈতিক দলের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের এখানে আইনের শাসন অনুপস্থিত। নির্বাহী বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং এর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বিচারালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোর্টে গেলে এখনো আপনারা পাবেন হাজারেরও বেশি লোক জামিনের অপেক্ষায় আছে।’ ব্যারিস্টার আমীর নিজে ক্ষমতাসীন দলের সাথে কাজ করেছেন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কারণে নিজ থেকে তিনি এখন এ কথা বলছেন। তার এই বক্তব্য থেকে বর্তমান সময়ে নির্বাচনী পরিবেশ কেমন, সেটি অনুধাবন করা যায়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট আগামী নির্বাচন সম্পর্কে একটি শঙ্কা তৈরি করছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও সেটি প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না। ভোটের ফলাফল জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে কি না। ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে কি না। সেই শঙ্কা ও প্রশ্ন রয়ে গেছে।’ তিনি মন্তব্য করেন, নির্বাচন যদি ত্রুটিপূর্ণ এবং ব্যর্থ হয় তবে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন ব্যর্থ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে বলা হয় ‘হাইব্রিড ডেমোক্র্যাটিক’ সরকার। তিনি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের কিছু আলামত তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছেÑ প্রধান বিরোধী শক্তিকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা, সীমানা পুনর্নির্ধারণের সময় বিভিন্ন কূটকৌশল, স্বাধীন গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের দাফতরিক অপব্যবহার, বিরোধী দলকে মিছিল-মিটিং করতে না দেয়া এবং প্রচারে সরকারি সুবিধা গ্রহণ করা।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নয়, সরকার পুরো ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে আছে। যদিও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত সব বিষয়ে একক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার কথা ছিল। কিছু কিছু বিষয়ে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এ ধরনের ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে এককভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের নিয়মকানুন একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ইঙ্গিতবহ নয়। এভাবে হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অচিরেই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। এই কমিশনকে সরকারের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিরোধীদের সমান সুযোগ করে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement