২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গুম ও গ্রেফতার

আতঙ্কের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

-

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, নির্বাচন কমিশন তা নিশ্চিত করে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গেফতার বন্ধ হওয়া তো দূরে থাক, তারা এখন গুম হওয়ার আতঙ্কে আছেন। আর প্রতিদিন শত শত বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। এমনকি নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা পর্যন্ত গুম হওয়ার পর লাশ নদীতে ভেসে উঠছে। বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, এমন একাধিক নিশ্চিত প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন।
যশোর-৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন রাজনৈতিক নেতা রাজধানীর একটি হোটেল থেকে গুম হয়ে যান। একাধিকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনের সময় এমন নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব; অথচ হোটেল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে গুম করা হয়েছে। ঘটনার পর কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এই গুমের ঘটনায় অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে গুম হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অভ্যন্তরীণ কোন্দল হলেও এই রাজনৈতিক নেতা ঢাকা থেকে কিভাবে গুম হন? তিনি তো এলাকায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারতেন। এ ছাড়া, গুম যারাই করুক না কেন, একজন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তদন্তের আগেই এমন মন্তব্য করে পুরো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেয়ার ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। পুলিশ এখন সেভাবে তদন্ত করে এর সাথে বিরোধী দলের আরো বহু নেতাকে হয়তো জড়িয়ে দেবে। গুম এখন ভয়াবহভাবে বেড়ে চলছে। গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭১ জন মানুষ গুম হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ বলছে, ফৌজদারি আইনে যেসব মামলা আছে সেগুলোর কারণে গ্রেফতার অভিযান চলবে। প্রশ্ন হলোÑ শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতাকর্মীর নামেও ফৌজদারি অপরাধ এমনকি খুনের মামলা থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন কিংবা সাংগঠনিকভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তাদেরকে কেবল গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার এজেন্ডা নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। এমন পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করেছে। এর দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement