২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী বিদেশীরা

তবে এতে বাধা ইসির কিছু অযৌক্তিক ধারা

-

যেকোনো দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা থাকেন। এটি একটি স্বাভাবিক রীতি। বাংলাদেশে অতীতে এই রীতি চর্চিত হতে দেখা গেছে; কিন্তু এ দেশে যখন নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন বিদেশীরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রগোষ্ঠী বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে না বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিদেশীরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে খবরে প্রকাশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে।
ইসি কর্মকর্তারা গত পরশু একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেনÑ এ মাসের শুরু থেকে আইআরআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ শুরু করেছে, তবে আগামী মাসের শুরু থেকে এ ব্যাপারে বিদেশীদের যোগাযোগে আরো গতি আসতে পারে। কিন্তু বিদেশীদের এই আগ্রহে ইসি ও সরকার ততটা সন্তুষ্ট নয় বলেই মনে হয়। বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠলেও নির্বাচন কমিশন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালায় এবার প্রথমবারের মতো কিছু অযৌক্তিক ধারা যোগ করেছে। এসব ধারা নিশ্চিতভাবেই পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিরুৎসাহিত করবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য তৈরি নীতিমালায় Ñ ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার অথবা ফেসবুক, টুইটার বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। সব সময় ইসির সরবরাহ করা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আইনগত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। গোপনে বুথে যাওয়া যাবে না। ভোট গণনার সময় একটি পর্যবেক্ষক দল থেকে একজন উপস্থিত থাকতে পারবেন। নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আগে থেকে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই করে অনাপত্তির জন্য তা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবে ইসি। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাকায় ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে পর্যবেক্ষকেরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের যে নির্দেশনা জারি করেছেন ইসি সচিব, তা-ও বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য কার্যকর হবে বলেই মনে হয়। ফলে বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কতটুকু করতে পারবেন, সে ব্যাপারে আশঙ্কা থেকেই গেছে।
ভোট পর্যবেক্ষণে বিদেশীদের কিছুটা অনীহা রয়েছে তহবিল সঙ্কটের কারণে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। তাই নির্বাচনে বড় আকারে পর্যবেক্ষক পাঠানোর মতো অর্থ তাদের হাতে নেই। তবে দূতাবাসগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। এরপর ইইউ’র পর্যবেক্ষক দল আসছে আগামী সপ্তাহে। মনিটরিং টিম পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র।
আমরা মনে করি, সরকার পর্যবেক্ষকদের ওপর অনৈতিক কড়াকড়ি প্রত্যাহার করলে এবারের নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement