২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু পর্যবেক্ষণ করবেন’

পর্যবেক্ষক থাকার প্রয়োজনটা কোথায়?

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পর্যবেক্ষণে থাকা পর্যবেক্ষকেরা কেন্দ্রের ছবি তুলতে পারবেন না। কেন্দ্রের পরিবেশ ভিডিও করতে পারবেন না। ভোট গ্রহণের সময় যতই ঝামেলা হোক না কেন, পর্যবেক্ষকেরা মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকেরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে এমন নির্দেশই দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে দেয়া মৌখিক নির্দেশে আরো বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণের সময় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়া যাবে না। এমনকি কোনো পর্যবেক্ষক মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারেÑ এমন কর্মকাণ্ড ঘটলে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও বাতিল করা হতে পারে এ হুমকিই পক্ষান্তরে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উচ্চারণ করেছেন।
গত পরশু মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে নির্বাচন কমিশন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব এ কথা বলেন। অথচ জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রণীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় এমন কোনো নিদের্শনা নেই, পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্রে ছবি তুলতে পারবে না। তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। গণমাধ্যমে তাদের সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছেÑ নির্বাচন চলার সময় এমন কোনো মন্তব্য করবেন না, যা নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা প্রভাবিত করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছে, ইসি সচিব এ ধরনের নীতিমালাবহির্ভূত নির্দেশ দিয়েছেন, তা তার মৌখিক নির্দেশ। যদিও তিনি অনেকটা সেনা শাসকের মতোই এসব নির্দেশ দিলেন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদের : কেন্দ্রে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না, কোনো ছবি তুলতে পারবেন না, কোনো কমেন্ট করতে পারবেন না, শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন। কেন্দ্রে যত প্রবলেমই হোক, তা পর্যবেক্ষণ করে আপনার কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। এরপর আপনি সবার কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে কম্পাইল করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবেন। সচিব এ সময় আরো বলেন, পর্যবেক্ষণের সময় গোপন কক্ষে যাওয়া যাবে না। কাউকে নির্দেশনা দিতে পারবেন না, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না। এগুলো কিয়ার করে বলে দেবেন। তিনি আরো বলেন, অনেক সাংবাদিক পর্যবেক্ষকদের সামনে ক্যামেরা ধরবেন উনি কিন্তু কথা বলতে পারবেন না। কোনো সংবাদমাধ্যমে লাইভে কথা বলতে পারবেন না। কমেন্টস করতে পারবেন না। ব্রিটেনের পুলিশের মতো মূর্তির দাঁড়িয়ে থেকে শুধু পর্যবেক্ষণ করবেন। একটা বিষয় মনে রাখবেন, নিবন্ধন যাতে বাতিল না হয়।
এই যদি হয় অবস্থা তবে পর্যবেক্ষক রাখার প্রয়োজনটা কী? লক্ষণীয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা কমে যাবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তহবিল সঙ্কোচনের কারণে বেশি সংখ্যায় পর্যবেক্ষক নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে। এটিও পর্যবেক্ষক সম্পর্কে সরকারের নেতিবাচক ধারণারই জের। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে পর্যবেক্ষক নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী পর্যবেক্ষণের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার? উপরোল্লিখিত নীতিমালাবহির্ভূত নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করা একান্ত জরুরি। না হলে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে জন-অনাস্থা আরো বাড়বে। নির্বাচন হবে প্রশ্নবিদ্ধ।


আরো সংবাদ



premium cement