২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সওজ অধিদফতরে ঘুষের তাণ্ডব

দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে

-

সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নাম ‘সড়ক ও জনপথ’ (সওজ) অধিদফতর। এটি সড়ক, যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সড়ক নেটওয়ার্ক তথা অপরিহার্য অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণের গুরুদায়িত্ব সওজের ওপর অর্পিত। তদুপরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়টি পরিচালনা করছেন ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি, অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদক। এই সরকারের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা সর্বদাই ব্যাপক উন্নয়নের কৃতিত্ব দাবি করে বলে থাকেন, সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে; কিন্তু দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে উন্নয়নের সুফল থেকে জনগণ রয়ে যাবে বঞ্চিত।
সওজের দুর্নীতি সর্বজনবিদিত এবং এটা যে কমেনি, তার প্রমাণ সওজের বিভিন্ন কার্যালয়ে ঘুষের দৌরাত্ম্য রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের সাম্প্রতিক অভিযান। তাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল, ঘুষের জন্য বিল আটকে রাখা হচ্ছে সওজ কার্যালয়গুলোতে। শুধু শাখা দফতরে নয়, খোদ সদর দফতরেও কাজের বিল পেতে পদে পদে ঘুষ দিতে হয় ঠিকাদারদের। তদুপরি, মোটা অঙ্কের ঘুষ না পেলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিল আটকে দিয়ে হয়রানি করা হয়। এর সাথে যোগ হয়েছে অবৈধ পার্সেন্টেজ কেটে রাখা। অর্থাৎ বিলের একটা অংশ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারকে না দিয়ে নিজেরাই রেখে দেন বেআইনিভাবে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এহেন অনিয়ম ও নৈরাজ্য যেন সওজের অলিখিত নিয়ম!
একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘুষ দিতে বাধ্য হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা এসব ব্যাপারে অভিযোগ করেন না নাজেহাল হওয়ার ভয়ে। অবশ্য ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া’য় এবার তাদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয় দুদকের হস্তক্ষেপ চেয়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগে দুদকের টিম সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় দফতরে আকস্মিক অভিযান চালায়।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ এসেছে, ঘুষ না দিলে নানা অজুহাতে সওজের ঠিকাদারদের বিল মাসের পর মাসÑ এমনকি কয়েক বছর ধরেও আটকে রাখা হয়। পাশাপাশি চলে ‘কমিশন বাণিজ্য’। অভিযানকালে সওজের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘সফটওয়্যার ও আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলছে বিধায় বিল শোধ করতে দেরি হচ্ছে।’ তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, ‘নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের ব্যাপারে আমার জানা নেই। আর তদবিরের জন্য ঘুষ লেনদেন করা হলে আমাদের কিছু করার নেই।’ দুদক টিম গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অভিযোগের ফলে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে গৃহীত ব্যবস্থাসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে এবং তারা এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। দুদক দ্রুত বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে। তাদের সূত্রে জানা যায়, সড়কে নতুন নির্মাণকাজ, সংস্কারকাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব ক্ষেত্রেই ঘুষের ‘বাণিজ্য’ চলছে। ইস্টিমেট তৈরি করা, টেন্ডার করানো এবং কাজ শুরু করার জন্য টেবিলে টেবিলে ঘুষের টাকা ঢালতে হয়। ঘুষ ও কথিত পার্সেন্টেজের সাথে বড় ধরনের চক্র জড়িত। জেলা-উপজেলাপর্যায়েও ঘুষের ছড়াছড়ি। দুদক এসব নিয়ে অনুসন্ধান চালানোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ দিকে, ঘুষের কারণে উন্নয়নকাজের স্থায়িত্ব হয় খুব কম। প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাঘাট তৈরি ও মেরামত করা হলেও অনিয়ম-দুর্নীতির দরুন কয়েক দিন না যেতেই সেগুলো আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নি¤œমানের কাজ করেও গা বাঁচানো যায় ঘুষের বিনিময়ে।
দুদকের ডিজি (প্রতিরোধ) বলেছেন, ‘ঠিকাদারের কাজসহ যেকোনো বিলের অর্থ শোধ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। কেউ ঘুষ দাবি করলে ভুক্তভোগীরা যদি ঘুষ দেয়ার আগেই জানান, তাহলে দুদক ঘুষখোরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অধিকার রাখে।’
আমরা মনে করি, সওজসহ সব সংস্থা, দফতর ও কর্তৃপক্ষের সততা, দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা চাই। তাহলে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, হয়রানি প্রভৃতি অনেক কমে যাবে এবং জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে সক্ষম হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে

সকল