২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য

-

সংসদীয় রাজনীতিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ইসি বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। অপর দিকে সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার পথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। সরকার যেসব উপমা উপস্থাপন করে যুক্তি দেখিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে, সেসব উপমা বাংলাদেশের বেলায় একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কারণ, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো নির্বাচন একটি সংস্কৃতি হিসেবে রূপ পায়নি। তাই সরকার প্রভাব বিস্তার করার সব সুযোগ গ্রহণ করে। প্রশাসনকে কাজে লাগায়। এই প্রশাসন যেমন মাঠ প্রশাসনের বেলায় সত্য, তেমনি পুলিশসহ সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
এই ব্যতিক্রম লক্ষ করা গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি ওঠেনি। এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্বাস তত্ত্বাবধায়কের ব্যাপারে এতটা দৃঢ় এবং মজবুত যে, সরকার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিচ্ছিল তখন আদালতের বন্ধু হিসেবে অ্যামিকাস কিউরিরাসহ সব সুশীল শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মহল ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সব নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকুক এটাই চেয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও শেখ হাসিনার অবস্থান গ্রহণের আগে পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ধারণাকে সমর্থন করেছে।
সেই ইতিহাস সবার জানা। তার পরও এখন মানুষ আবার তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর ব্যাপারে ভীষণ রকম আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এর কারণ সরকারের আচরণ প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রের কথা ঠিকই বলে, কিন্তু আচরণ করে ঠিক এর বিপরীত। দু’তিনটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছাড়া আর সব নির্বাচন সরকারি দলের দাপটের কারণেই একতরফা হয়েছে।
তাই অতীতের অভিজ্ঞতা মানুষকে আশ্বস্ত না করে একধরনের শঙ্কার ভেতর রেখেছে। জনগণ নিজের ভোটটা ঠিকমতো পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবে তো? সেটা ঠিক মতো গোনা হবে তো? এসব জল্পনা, কল্পনার সাথে বিরোধী দল দমনের যে নজির সরকার স্থাপন করেছে তাতে বিরোধী দলগুলো আস্থার সঙ্কটের কারণে প্রথমে নির্বাচনে যেতেই চায়নি। শেষ পর্যন্ত সব বিরোধী দল দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েও নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
এখন ইসির দায়িত্ব অস্ত্র উদ্ধার করা, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রেখে দায়িত্ব পালনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। মাঠ প্রশাসনকেও এমনভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখা, যাতে সরকারের বেনিফিসিয়ারিরা কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা মেরুদণ্ড সোজা রেখে সক্ষমতার পরিচয় দিলেই শুধু মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। নয়তো নির্বাচন হবে কিন্তু ফলাফল হাইজ্যাক হয়ে যাবে।
আমরা আশা করি, ইসি বিশেষত সিইসি সংবিধান প্রদত্ত সব ক্ষমতা প্রয়োগ করে হলেও সক্ষমতার পরিচয় দেবেন। তবে এখনো সরকারের দাপটের কাছে ইসি অনেকটা অসহায়ের মতো বলে মনে হয়Ñ যা নিরপেক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করে জনগণকে আশ্বস্ত করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ইসির সক্ষমতাই একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারে, যা শুধু জরুরি নয়, অপরিহার্যও বটে।

 


আরো সংবাদ



premium cement