২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পলিথিনে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি

ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে

-

পরিবেশ দূষণ সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিবেদনগুলো যেসব তথ্য-উপাত্ত দিচ্ছে, তাতে বলা হচ্ছে পৃথিবীর পরিবেশ দ্রুত বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এই দূষণের হার মানুষের ধারণার থেকেও দ্রুতগতিতে চলছে। শিল্প উৎপাদনে ব্যবহার উচ্চ হারে জীবাশ্ম জ্বালানি অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে দ্রুত পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। অন্য দিকে কৃত্রিম তন্তু রাসায়নিক পদার্থের অধিক হার উৎপাদন ও ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবেশ সচেতনতাও বাড়ছে। মানুষ এখন অধিক হারে পরিবেশ সুরক্ষায় কথা বলছে। মেগাসিটি ঢাকায় পলিথিন ব্যবহারের মাত্রা যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেড়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা এ নিয়ে প্রচারাভিযান চালিয়েছে। এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি উৎসাহব্যঞ্জক।
‘আগ্রহ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ঢাকায় পলিথিন বিপুল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারাভিযান চালিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, ঢাকায় প্রতিদিন এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এগুলোর ঠিকানা হচ্ছে সুয়ারেজের লাইন। আবার উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতলসহ আরো নানা ধরনের অপচনশীল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য। পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণে বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। ‘ঢাকা আমাদের বাড়ি, নিজ বাড়িকে পরিষ্কার রাখি’ সেøাগানকে সামনে রেখে তারা প্রচারাভিযান চালায়। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রচারাভিযানটি শুরু হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য পাঠায় তারা। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের এখনই সময়। এটি ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাটি প্লাস্টিকের বর্জ্য নিয়ে প্রচারাভিযান চালায়। তারা ঢাকাকে তাদের কর্মকাণ্ডের আওতা হিসেবে গণ্য করেছে। বাস্তবে প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার পুরো দেশের জন্য একটি বিশাল সমস্যা। ঢাকা শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম যেমন প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য অকোজো হয়ে যাচ্ছে, একইভাবে সারা দেশে আরো কয়েক কোটি পলিথিন যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিকর এই পলিথিন বর্জ্য সারা দেশের নদীনালা, হাওর-বাঁওড়ের পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে করছে পূতিদুর্গন্ধময়। নানাভাবে পশুপাখির পেটে ঢুকে পড়ছে প্লাস্টিক। একই সমস্যায় পড়েছে আজ বিশ্ব। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯০ শতাংশ সামুদ্রিক পাখির পেটে এখন প্লাস্টিকের উপস্থিতি। অথচ ১৯৬০ সালে এই হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।
বেসরকারি সংস্থা ‘আগ্রহ’ ঢাকা শহরকে পলিথিনের বর্জ্যমুক্ত রাখার প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। মূলত পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থের বিপুল ক্ষতি থেকে মানব জাতি রেহাই পাচ্ছে না। সবাই এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত। এই পদার্থ ব্যবহার করলেও কতটুকু মাত্রায় কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে তার হিসাব থাকা উচিত। আমাদের দেশে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার সীমিত করা হয়েছিল। সেটি অনেকটাই আমাদের জন্য উপকারী হয়েছিল, কিন্তু আবার পলিথিনের গণব্যবহার শুরু হলো। কৃত্রিম তন্তুর বদলে প্রাকৃতিক তন্তু পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে পাটের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববাসীর উচিত পরিবেশ ধ্বংসকারী কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার থেকে সরে আসা। ক্রমান্বয়ে এর ব্যবহার সঙ্কুচিত করা। আমাদের দেশের মানুষের সচেতন হওয়া দরকার। ভোক্তাপর্যায়ে এ ব্যাপারে সচেতনতা এ ধরনের ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার সীমিত করতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement