২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিপ্লব ও সংহতি দিবস

মূল চেতনা হোক জাতীয় ঐক্য

-

বাংলাদেশ এখন সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অনাস্থা ও সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতি শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ভীতির চোখে দেখছে নিরীহ শান্তিপ্রিয় নাগরিকেরা। বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সে দিনটির প্রাক্কালে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ও চক্রান্তকারীরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তবে সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিয়েছিল দেশবিরোধী ওই চক্রের অপপ্রয়াস। সুসংহত করেছিল রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। সংগ্রামী জনতা গর্জে উঠেছিল বিদেশী আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ এবং তার দোসরদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার সুদৃঢ় প্রত্যয়ে। সিপাহি-জনতার বৈপ্লবিক সংহতির অনন্য দিনটিতে বাংলাদেশের স্বকীয় জাতিসত্তাসহ অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ঐতিহ্য মূর্ত হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে আমাদের দেশ ও জাতি বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে সঙ্কটের সম্মুখীন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য, সুশাসন ও ঐতিহ্যের চেতনা ভূলুণ্ঠিত। এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক দিনটি আমাদের প্রেরণা হতে পারে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য।
১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর তদানীন্তন চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ হঠাৎ সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের পথে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একই সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা নজিরবিহীন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিস্থিতি এতই অনিয়ন্ত্রিত ও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে যে, কার্যত সরকারের কোনো অস্তিত্বই অনুভূত হচ্ছিল না। এ দিকে ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকায় সিপাহিরা একজোট হয়ে জিয়াকে মুক্ত করে আনেন। তাদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। সবাই রাজপথে নেমে জিয়াকে স্বাগত এবং সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন দেশকে চরম নৈরাজ্যের মহাবিপদ থেকে রক্ষার জন্য। সেনাপ্রধান জিয়াকে এ অবস্থায় রাষ্ট্রচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের আকাক্সক্ষামাফিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এমন পটপরিবর্তন অভাবনীয়। সৈনিক-জনতা যাকে দেশ চালনার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিল, তিনি দৃঢ়তার সাথে রাষ্ট্রতরীকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন শত প্রতিকূলতার সমুদ্রতরঙ্গ উপেক্ষা করে। দুর্ভাগ্য, এ দেশের বৈরী শক্তির হাতে তাকে জীবন দিতে হলো শেষ পর্যন্ত। আজ সেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করি এবং ’৭৫-এর সেই দিনের অনবদ্য জাতীয় প্রতিরোধের অন্য বীর নায়কদের প্রতিও জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
৭ নভেম্বরের আদর্শ হচ্ছে দেশপ্রেম, জাতীয় মর্যাদা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের ঐক্য এবং ইসলামি মূল্যবোধ। সর্ববিধ সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতির স্বার্থে চিন্তাভাবনা ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেয় ঐতিহাসিক দিনটি। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসী শক্তির কার্যকর মোকাবেলার জন্য। এই অবিস্মরণীয় দিনে আমরা আহ্বান জানাই, আসুন, দ্বিধাসংশয় ও হিংসাবিদ্বেষ ভুলে সবাই এক হয়ে দেশ থেকে চিরতরে দূর করি বিভাজনের রাজনীতি, শোষণের অর্থনীতি ও অবক্ষয়ের সংস্কৃতি। সেই সাথে, জাতীয় ঐক্যের শক্তিবলে গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকাশ এবং মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করি। সুদৃঢ়প্রত্যয়ে ও যৌথ সংগ্রামে অবসান ঘটাই সন্ত্রাস-সহিংসতা, দুর্নীতি-দলীয়করণ, ক্ষমতার দম্ভ ও অপপ্রয়োগসমেত সমাজ, সরকার, রাষ্ট্র ও রাজনীতির যাবতীয় গ্লানির।


আরো সংবাদ



premium cement