২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আদালত প্রাঙ্গণে হামলা

ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে আইনের শাসন

-

বাংলাদেশে আইন ও আদালতে এমন সব ঘটনা ঘটছে, যাতে এর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে আদালত। সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্যই মানুষ যায়; কিন্তু বাংলাদেশে আদালত আজ অনিরাপদ জায়গায় পরিণত হয়েছে। কারণ সেখানে বিচারপ্রার্থীদের কোনো নিরাপত্তা থাকছে না। পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যে বিচারপ্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এ ধরনের অভাবনীয় ঘটনা ঘটে বলে জানা যায় না। যেখানে অপরাধের বিচার হওয়ার কথা, সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জিম্মায় থাকা বিচারপ্রার্থীর ওপর প্রকাশ্য হামলার ঘটনা ঘটছে। এমনকি আদালত প্রাঙ্গণে দুই রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
রংপুরে একটি মানহানির মামলায় জামিনের শুনানির সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতা প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে তিনি আহত হয়েছেন। ব্যারিস্টার মইনুল মানহানির একাধিক মামলায় কারাগারে আছেন। কারাগার থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুনানির জন্য আদালতে নিয়েছিল গত রোববার। এ সময় তার ওপর হামলা চালানো হয়। আদালতে শুনানির সময় তার ওপর হামলার বিবরণ তিনি নিজে দিয়েছেন। কারারুদ্ধ মইনুল হোসেনের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এমন পরিস্থিতিতে তার ওপর যেকোনো ধরনের হামলার দায় সরকারের ওপর বর্তায়, আর আদালতও এ দায় এড়াতে পারেন না।
আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের অনভিপ্রেত হামলার ঘটনা যে এবার প্রথম ঘটল, তা নয়। এর আগে সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় একটি মামলায় জামিন নিতে গিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন। তার ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই হামলা চালিয়েছিল। ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিরা আদালত প্রাঙ্গণে একের পর এক এভাবে হামলার শিকার হচ্ছেন। মইনুল হোসেন কিংবা মাহমুদুর রহমান যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তবে বিচার করে শাস্তি দেবেন আদালত। তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে হামলার অর্থ হলোÑ আদালত নয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বিচার বিভাগের ওপর শুধু আঘাত নয়, ফৌজদারি তথা দণ্ডনীয় অপরাধ। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে অবিলম্বে। একই সাথে আদালতের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও মর্যাদা রক্ষার জন্য এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের কার্যকর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement