২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় অসৎ উপায়

ঘ ইউনিটের ফলাফল বাতিল করা হোক

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কয়েক বছর ধরে বিতর্ক উঠছে। একের পরীক্ষা অন্যকে দিয়ে দেয়ানো, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করার চিত্র বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। এগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক কর্তৃপক্ষকে খুব বেশি ভাবায়নি। অর্থাৎ সবচেয়ে যোগ্য ও মেধাবী ছাত্রদের বাছাই করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ততটা আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিটা যেন হঠাৎ করে লাফে অনেকটা বেড়ে গেছে। এক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্র অন্য ইউনিটে একেবারে প্রথম স্থান অধিকার করে বসেছে। একজন নয়, এ ধরনের ভুতুড়ে ফলাফলের ঘটনা ঘটেছে শত শত প্রার্থীর ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সীমিত পরিসরের দুর্নীতি এবারে যেন একেবারে বিস্তারিত রূপ লাভ করল।
সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ হয়েছে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পেয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম হওয়া জাহিদ হাসান আকাশ ফেল করেছেন নিজের মূল ইউনিট ‘গ’তে। জাহিদ ‘ঘ’ ইউনিটে রেকর্ড ১১৪ দশমিক ৪০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। অথচ নিজের ইউনিটে জাহিদ মাত্র ৩৪ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে ফেল করেছেন। পাস নম্বর ৪৮। দুই ইউনিটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাহিদ ‘গ’ ইউনিটে বাংলায় পেয়েছে ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে পেয়েছে ২ দশমিক ৪০, হিসাব বিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২ এবং ফিন্যান্সে ৯ দশমিক ৮৪ পেয়ে ফেল করেছেন। এক মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় জাহিদ বাংলায় ৩০-এর মধ্যে ৩০, ইংরেজি ৩০-এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২৮ দশমিক ৩০ এবং সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে পেয়েছেন ২৫ দশমিক ৫০ নম্বর। ‘ঘ’ ইউনিটে প্রায় একই ধরনের ফলাফল দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান শাখা থেকে আসা তাসনীম বিন আলমের ক্ষেত্রে। তাসনীম নিজ শাখা ‘ক’ ইউনিটে ৪৩ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে ফেল করলেও ‘ঘ’ ইউনিটে ১০৯ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে নিজের শাখার প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ১০০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন নিজ নিজ শাখার ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। একজন ছাত্র একবার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করবে; আবার এক মাসের মধ্যে প্রায় একই ধরনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম হয়ে যাবেন বিষয়টা স্বাভাবিক নয়। ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম হওয়া জাহিদ শুধু প্রথম হয়নি রেকর্ডসংখ্যক মার্ক পেয়েছে। সে নিজের ইউনিটে পরীক্ষায় বাংলা-ইংরেজিতে একেবারে দুর্বল নম্বর পেয়ে ফেল করেছেন। কিন্তু একই ধরনের পরীক্ষায় এক মাস পরে বাংলায় ৩০-এর মধ্যে ৩০ পেয়েছেন ইংরেজিতে পেয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর, ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল কোনোভাবে স্বাভাবিক বলা যায় না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে এককালে স্বীকৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে গেছে সত্যি, কিন্তু এখনো সারা দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এর কদর সবচেয়ে বেশি। অন্ততপক্ষে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত যোগ্যরা এখানে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু এবারের ভর্তি পরীক্ষায় যে ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে তাতে এই বিশ্বাসে ধস নামবে। সাধারণ ছাত্ররা এর ফলাফল বাতিলের আন্দোলন করছেন। আমরাও মনে করি, ফলাফল বাতিল করে এ বিষয়টি পূর্ণ তদন্ত করা হোক। জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।


আরো সংবাদ



premium cement