২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
‘গায়েবি মামলায়’ উদ্বেগ টিআইবির

বন্ধ হোক এই অপসংস্কৃতি

-

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক পদবাচ্যের আবির্ভাব ঘটেছে। এর নাম পুলিশের ‘গায়েবি মামলা’। কেউ কেউ একে আবার ‘ভুতুড়ে মামলা’ নামেও অভিহিত করছেন। এ মামলার প্রকৃতি হচ্ছেÑ এ মামলা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল-মহলের নেতাকর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ অযৌক্তিক মামলা দায়ের করে। ঘটনাই ঘটেনি এমন কথা উল্লেখ করে পুলিশ এসব মামলা দায়ের করে। এতে কোনো কোনো মামলায় কিছু চিহ্নিত আসামি করা হয়, যারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল-মহলের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেই সাথে আসামি করা হয় অসংখ্য অজ্ঞাতনামাকে। যাদের নামধাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়, তাদের অনেকেই বহু আগে মারা গেছেন। কেউ কেউ মামলায় বর্ণিত ঘটনার সময় বিদেশে চিকিৎসা কিংবা হজ পালনের জন্য অবস্থান করছিলেন। এসব মামলার যে কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই, তা এ দেশের জাতীয় গণমাধ্যমের সরেজমিন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়েছে। পুলিশ বাদি হলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব মামলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে, কিংবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেÑ তারা উপরের আদেশে এসব মামলা দায়ের করেছে।
সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এসব ‘গায়েবি মামলা’য় ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত, বিদেশে অবস্থানরত এমনকি মৃত ব্যক্তিদের আসামি করে পুলিশের দায়ের করা মামলার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (পিআইবি)। একই সাথে এ ধরনের দৃষ্টান্ত পুলিশের অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ রূপ আত্মঘাতী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। গত বুধবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবি মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে; যেখানে আসামি হিসেবে ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত, বিদেশে অবস্থানরত এমনকি মৃত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পুলিশের একাংশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড পেশাদারিত্বের উদ্বেগজনক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, সরকার তথা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশে বা চাপের ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দলীয় প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়ার দৃষ্টান্ত নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশ তথা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনেকাংশে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
আমরাও মনে করি, এ ধরনের অপসংস্কৃতি এই মুহূর্তে অবসান হওয়া দরকার। কিন্তু এর অবসান হওয়ার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। বরং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে এর সপক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে থাকেন। বলা হচ্ছে, যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ধরনের দমন-পীড়নকে সহজতর করে তোলার জন্য প্রণয়ন করা হচ্ছে নতুন নতুন আইন। এসব আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। এ ধরনের প্রবণতা মানুষের সার্বিক অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। আমরা আশা করব, সরকার সে উপলব্ধি থেকে এ ধরনের অপসংস্কৃতি চর্চার প্রবণতা বন্ধ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement