২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
একনায়কতান্ত্রিক আচরণ আর কত

জনমতকে দ্রুত আমলে নিন

-

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য বেশ ক’টি রাজনৈতিক শক্তি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। উদ্যোক্তাদের আশা এই ঐক্যের পরিসর আরো বড় হবে। অন্তত কয়েকটি ইস্যুতে ভিন্ন মত পোষণ করার মতো কোনো বিরোধীদলীয় ভাবধারার কর্মী বা সমর্থক নেই, তেমনি নেই কোনো দলও। এই ক্ষেত্রে সরকারি জোটের ভেতর অবস্থান করে কিন্তু রাজনৈতিক মত লালন করে বিরোধী দলের মতো। অন্তত সংসদ ভেঙে দেয়া, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থান, সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচনের মাঠ সমতল রাখার মতো বিষয়গুলো ছাড়াও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রতি প্রায় অভিন্ন মত পোষণ করেন।
জাতীয়তাবাদী ধারার দলগুলো ছাড়াও বামপন্থী এবং ইসলামপন্থি দলগুলোও প্রায় অভিন্ন মত পোষণ করে। পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও সুশীলসমাজও যারা একেবারে দলীয়ভাবে সুবিধাভোগী হয়ে জাননি তারাও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিরোধীদলীয় ধারায় বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। একইভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কয়েকটি গণতান্ত্রিক দেশও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বারবার সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
এই যখন বাস্তব অবস্থা তখন সরকার জনমত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন না করেই হামলা-মামলা অব্যাহত রেখেছে। তখন গায়েবি মামলার মতো বেআইনি এবং জনগণের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার, মৌলিক অধিকার এবং সাধারণ শিষ্টাচারকেও আমলে নিচ্ছে না। একই সাথে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং জনমত যাতে স্বাধীনভাবে প্রতিফলিত হতে না পারে সেজন্য সব মহলের আপত্তির পরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছে। সম্পাদক পরিষদের সাথে যে বৈঠক হয়েছিল সেই বৈঠকের প্রতিশ্রুতির প্রতিও কোনো সম্মান দেখানোর সাধারণ দায়বোধ ও সৌজন্যটুকুও সরকার প্রদর্শন করেনি। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামও এ ধরনের আইন না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ ও আহ্বান জানিয়েছিল, সেসব অনুরোধ ও আহ্বানের প্রতিও সরকার কোনো সম্মান প্রদর্শন করেনি।
সরকারের সব তৎপরতা ও কর্মকাণ্ড এখন পরিচালিত হচ্ছে পুরো একদলীয় কিংবা রাজতান্ত্রিক ধারায়। এর কারণ হতে পারে সরকার আর কোনো ভিন্নমত সহ্য করবে না। নির্বাচন করবে এককভাবে, অন্য কাউকে নির্বাচনের মাঠে সহ্য করা হবে না। এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ একটি মাত্র উপসংহার টানেÑ সেটা হলো, এই সরকার এতটা অন্ধ ও বেপরোয়া হয়ে গেছে, যার পরিণতি কোনোভাবেই ভালো হবে না।
এই দেশের জনগণের একটি সংগ্রামী ও প্রতিবাদী ঐতিহ্য রয়েছে। সম্ভবত জনগণকে সেই পথেই হাঁটার জন্য সরকার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। জানি না এর ফলাফল নিশ্চিত গণ-অভ্যুত্থানের পথ রচনা করতে যাচ্ছে কি না। আমরা মনে করি, সরকার একচোখা ও একরোখা দৈত্যের মতো আচরণ বন্ধ না করলে সরকারের সাজানো সব পরিকল্পনা নিমেষে জনরোষের কাছে ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। এ দেশের জনগণের ইতিহাস হার না মানার ইতিহাস। এবারো জনগণ শেষ পর্যন্ত ন্যায়সঙ্গত সব অধিকার কেড়ে নেবে। তার আগে শাসক দল ও গোষ্ঠীর বোধোদয় ঘটলে দেশ-জাতির জন্য কল্যাণ, নয়তো একটি অনাকাক্সিক্ষত পরিণতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর আছে বলে কোনো মানুষ মনে করে না।


আরো সংবাদ



premium cement