২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এনজিওর নামে প্রতারণা

সংশ্লিষ্ট বিভাগ দায় এড়াতে পারে না

-

দেশজুড়ে অসংখ্য এনজিও রয়েছে। অনেক ভালো কথা বলে তারা তহবিল সংগ্রহ করে। একপর্যায় তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অফিসে তালা ঝুলতে থাকে। সাধারণত এনজিওগুলো বেকারত্ব দূর করা, ঋণ দান, প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা ও বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের জীবনমান উন্নয়নসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও নিবন্ধনও নিয়ে থাকে। শুধু এ ধরনের এনজিও সংস্থার তিন হাজারই চট্টগ্রামে গায়েব হয়ে গেছে। এদের নেই কোনো অফিস ও ঠিকানা। বাস্তবে মাঠপর্যায়ে কোনো কার্যক্রম নেই এসব এনজিওর। শুধু সমাজসেবা অধিদফতরের নিবন্ধন তালিকায় আছে এসব এনজিও সংস্থার নাম। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছেÑ বছরের পর বছর হদিস না থাকলেও এসব সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করছে না সমাজসেবা অধিদফতর। প্রতি অর্থবছরে এসব এনজিও সংস্থার আর্থিক কার্যক্রম নিরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা-ও করছে না সমাজসেবা অধিদফতর। বরং এসব এনজিওর কোনোটির প্রকল্পের নামে প্রতি বছর সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নানা কৌশলে তা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল।
সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বিভাগের দুই হাজার ৯৫৯টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও শুধুই নামসর্বস্ব। তাদের কোনো কাজের তদারকি নেই। কোনো ধরনের খোঁজখবরও কেউ নেয় না। এসব এনজিওর কার্যক্রমের কোনো নিরীক্ষা হয় না। বিভাগীয় সমাজসেবা অফিসের পরিসংখ্যানেও গায়েবি এসব সংস্থার তালিকা পাওয়া গেছে। তবে তা নিষ্ক্রিয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অফিস বা ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার কথা অফিসের লোকজন মুখে স্বীকার করলেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন নেই।
যদ্দূর জানা যায়, ইতোমধ্যে অনেক এনজিওর নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব এসেছে। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যদিও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেনÑ নিষ্ক্রিয় এনজিওগুলোর নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সাধারণত সমাজসেবা অধিদফতর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলো (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ ও স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলো (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধি, ১৯৬২ অনুযায়ী এনজিওগুলোর নিবন্ধন দেয়া হয়। বাস্তবে ইতোমধ্যে নিবন্ধন নিয়ে অনেক এনজিও গায়েব হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ীÑ শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে ৯ হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় রয়েছে দুই হাজার ৯৫৯টি। বাকি ছয় হাজার ৬৫৭ সংস্থা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে অনেক সংগঠন-সমিতি ঋণকার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক এনজিওর মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম না থাকলেও প্রকল্প বরাদ্দ পাচ্ছে। অথচ ঋণকার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সুতরাং সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে ঋণকার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
একজন কর্মকর্তার মত হচ্ছেÑ নিষ্ক্রিয় সংস্থাগুলোর মধ্যে হয়তো কয়েকটা এনজিও রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্লাব ও সমিতি। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের উচিত, ঢালাওভাবে এসবকে এনজিও না বলে অবকাঠামো ও কার্যক্রম অনুযায়ী কোনটি এনজিও বা কোনটি সংগঠন-সমিতি নির্ধারণ করে দেয়া। এতে করে অনিয়মের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে এনজিওর নামে একশ্রেণীর প্রতারকচক্র রয়েছে এবং তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হওয়া জরুরি। তাদের সুন্দর কথায় প্রলুব্ধ হয়ে যারা সর্বস্ব হারিয়েছেÑ তাদের ব্যাপারেও সরকারের দায়দায়িত্ব থাকা সঙ্গত। আশা করি, এনজিও নামের আড়ালে ছদ্মবেশী প্রতারকচক্রের প্রতারণা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement