২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাংবাদিকদের ওপর হামলা

দোষীদের আইনের আওতায় আনা নিয়ে সন্দেহ

-

গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে চলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় এক আন্দোলন। এর খবর সংগ্রহের দায়িত্ব পালনের সময় নির্মমভাবে পেটানো হয়েছিল কর্তব্যরত সাংবাদিকদের। সে আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। একটি জাতীয় দৈনিক জানিয়েছে, হামলাকারীরা ঢাকা কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ হামলায় ১২ জন সাংবাদিকসহ ৩০ জন আহত হন। এই হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিতও হয়েছে। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে যায় সরকার। সাংবাদিকদের চাপের মুখে এর প্রতিকারের জন্য তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে সাংবাদিকদের ওপর প্রকাশ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে অনেকের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে গত ৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী। ওই চিঠির পরে কী পরিণতি হলো, তা জানতে চেয়ে একটি জাতীয় দৈনিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ও পুলিশ শাখায় যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এই দুই শাখার কর্মকর্তারা এ ধরনের কোনো চিঠি ‘হাতে পাননি’ বলে জানিয়েছেন। এ দিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি তো হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন পুলিশ এখনো মামলা করেনি, তা পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে হবে। তবে আমি আবারো আশ্বস্ত করতে চাই, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সাংবাদিক নেতাদের কাছে দেয়া কথা আমরা রাখব।’
অপর দিকে, চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন কি না, জানতে চাইলে ওই পত্রিকাকে তথ্যমন্ত্রী সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমাদের তো আশ্বস্ত করা হয়েছিল, তারা ব্যবস্থা নেবেন, কিন্তু নিল না। সাংবাদিকদের ওপর এভাবে হামলা করার পরও যদি বিচার না হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?’
এভাবে গত দুই মাস ধরে তথ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার এমন আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু আসল কাজ কিছুই হয়নি। ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার জন্য সরকার খুব তৎপর হয়ে সংসদে পাস করিয়ে নিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তা সাংবাদিকদের কার্যত হাত-পা বাঁধার পথকেই আরো প্রশস্ত করবে। এই আইন পাসের পর এবার অনলাইন, টিভি, রেডিও নিয়ন্ত্রণের নতুন করে আনা হচ্ছে সম্প্রচার আইন ২০১৮। আশঙ্কা হয় সেটিও হবে আরেকটি নিবর্তনমূলক আইন।
আমরা চাই, সরকার সাংবাদিকদের ওপর প্রকাশ্য হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনবে এবং সাংবাদিকদের ‘হাত-পা বাঁধা’র যাবতীয় অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকবে। দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তা অপরিহার্য।


আরো সংবাদ



premium cement