২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মদপানে বছরে সাড়ে ৩ হাজার মৃত্যু

দেশে আইন থাকলেও তদারকি নেই কেন?

-

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে মদ পান করে মারা গেছে তিন হাজার ৩৪৬ ব্যক্তি। এই তথ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানিয়েছে, মদের ক্ষতিকর প্রভাবে কেবল লিভার সিরোসিসেই মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ২০৯ জনের। মদপানজনিত ক্যান্সারে ৭৪৩ জন মারা গেছে এবং মাতাল হয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে আরো ৩৯৪ জন। জাতিসঙ্ঘের এ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশে আইনে মদের ব্যাপারে অনেক কড়াকড়ি থাকলেও মদপান রোধ করার ক্ষেত্রে তদারকির তেমন ব্যবস্থা নেই।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘মদ ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৮’ প্রকাশ করেছে। ৪৭৬ পৃষ্ঠার এ দীর্ঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৬ সালে পৃথিবীতে যত মানুষ মারা গেছে, এর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ মৃত্যুর কারণ মদপান। অর্থাৎ প্রতি ২০ জনে একজন মদ পান করে মারা যায়। এ হিসেবে কেবল ২০১৬ সালেই বিশ্বে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে মদপানের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিজি ট্রেড্রোস গ্যাব্রাইসাস বলেছেন, ‘ভয়াবহ এ ঝুঁকি প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রায় ২৩০ কোটি লোক মদ পান করে থাকে। মদ্যপায়ীরা সামাজিক সমস্যা বেশি সৃষ্টি করছে ধনী দেশগুলোয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় মদ্যপায়ীদের সংখ্যা সর্বাধিক। ইউরোপে মাথাপিছু মদপানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ২৩ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ আর চার কোটি ৬০ লাখ নারী মদ পান করে সমাজে নানা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, ভয়াবহ ঝুঁকি সত্ত্বেও সামনের এক দশকে সমগ্র বিশ্বে মদপানকারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছে, এখানে মোট জনসংখ্যার দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ অন্তত একবার ৬০ গ্রামের অধিক মদ পান করে এবং তারা ১৫ বছরের বেশি বয়সী। ভারতে মাসে ৬০ গ্রাম মদ পান করে ১৭ শতাংশ লোক। পাকিস্তানে এ হার দশমিক ৩ শতাংশ।
অপর দিকে ২০১৬ সালে মদ ছাড়ার ওয়াদা করে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তা পূরণ করেছে।
আলোচ্য প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেশির ভাগ দেশে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয় মদের ওপর। কিন্তু কম দামে মদ বিক্রি কিংবা মদের দামের ওপর ছাড় দেয়ার বিরুদ্ধে কড়া কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিনটি বিষয়ে জোর দিয়েছেÑ মদ গ্রহণের পরিমাণ, স্বাস্থ্য ও সমাজের ওপর মদের প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট নীতি ও কর্মসূচি। বাংলাদেশের ব্যাপারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও সমাজের ওপর মদের প্রভাব এবং আইনের প্রয়োগ বিষয়ে এ দেশে কোনো নজরদারি নেই।
এটা নিদারুণ প্রহসনমূলক ব্যাপার যে, দেশে দিনের পর দিন চরম কঠোরতার সাথে মাদকবিরোধী অভিযান চলে; অথচ মদপান রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে মদপানের কারণে এবং সংশ্লিষ্ট রোগব্যাধিতে এযাবৎ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইন থাকার পরও তা প্রয়োগ না করার জন্য প্রশাসনই দায়ী। গতানুগতিক কর্মসূচি পালন, ক্ষমতাসীন মহলের রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর কিংবা মাদকদ্রব্য থেকে কিছু শুল্কপ্রাপ্তির লোভ আর নয়। জনগণ চায় মদপানসহ সব ধরনের মাদকের উৎপাদন, মজুদ, বিপণন, পাচার প্রভৃতি সম্পূর্ণরূপে এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য এ মুহূর্তেই সরকার সর্বত্র কঠোর পদক্ষেপ নিক।

 


আরো সংবাদ



premium cement