২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিসর যেন স্বাধীন চিন্তার কারাগার

প্রতিবাদী হতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে

-

অ্যামনেস্টির ভাষায় মিসর এখন সেই দেশের ভিন্নমতের মানুষের জন্য কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছে। কার্যত কারাগার এখন ভিন্নমতের লোকের জন্য ঠাঁই নেই অবস্থা। তাছাড়া গেল সপ্তাহে কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে নতুন করে কঠোর শাস্তির আওতায় নেয়া হয়েছে। এর বাইরে সাজানো আদালতে প্রায় প্রতিদিন কোনো-না-কোনো গণতন্ত্র বা মুক্তমনা মানুষকে শাস্তি ঘোষণার ব্যবস্থা এক ধরনের রুটিন-ওয়ার্ক হয়ে গেছে।
এই নিপীড়ন বন্ধ করতে শান্তিপূর্ণ মত প্রকাশের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে মিসর কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সাথে যে আইনে মিসরের নাগরিকদের বাকস্বাধীনতাকে কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে, সে আইনটিও বিলুপ্ত করার আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, মিসর এখন সমালোচকদের জন্য এক উন্মুক্ত কারাগার। সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, মিসরবাসী এখন অভূতপূর্ব কঠোরতার মধ্যে তাদের দিন অতিবাহিত করছে। পুরো দেশে এখন মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চেপে ধরা হয়েছে।
অ্যামনেস্টির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ও দেশটির সাধারণ মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১১১ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রচারণা পরিচালক নাজিয়া মনে করেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মিসরে সরকারের সমালোচনা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক। প্রেসিডেন্ট সিসির শাসনামলে দেশটির নাগরিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ করতে চাইলে তাদেরও অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অ্যামনেস্টির এই প্রতিনিধির ভাষায় মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী নিষ্ঠুর। তারা নির্মমভাবে স্বাধীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জায়গাগুলোয় দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। অতীতের সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের দমনমূলক শাসনকালের চেয়েও এ পদক্ষেপগুলো অনেক কঠোর, যা সমালোচকদের জন্য মিসরকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে। অবশ্য মিসর সরকার অ্যামনেস্টির এ বিবৃতির ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমনিতে কায়রো সবসময় অপেশাদারি আচরণ ও শত্রুপক্ষের হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করার জন্য অ্যামনেস্টি বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অভিযুক্ত করে থাকে। তাছাড়া বহির্বিশ্বের যেসব মুক্তমনা মানুষ মিসর সম্পর্কে মন্তব্য করে তাদের ব্যাপারেও মিসর সরকার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে।
আমরা মনে করি, অ্যামনেস্টি মিসর সম্পর্কে কোনো বাড়তি মন্তব্য করেনি। বরং যা বাস্তব তাই প্রকাশ করেছে। তাই মুসলিম বিশ্ব ও সব আন্তর্জাতিক সংস্থার উচিত মিসর সরকারের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করা, যাতে মিসর নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। কারণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। আশা করি বিশ্ব সম্প্রদায় এ ব্যাপারে মনোযোগী হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement