২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতীয় ঐক্যের ডাক

সরকারও এতে সাড়া দিতে পারে

-

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত অনিশ্চয়তা বেড়ে যাচ্ছে। আর মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও কী পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে নিয়মকানুন ঠিক হয়নি। বিরোধী দল এ ব্যাপারে কয়েক বছর ধরে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করে এলেও সরকার তাতে পাত্তা দেয়নি। এ অবস্থায় নির্বাচনী বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কার্যকর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জোরালো ডাক দেয়া হয়েছে নাগরিক সমাবেশ থেকে।
নাগরিক সমাবেশ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণাপত্রে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়। গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলা, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যের কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাবেশে বর্তমান সরকার পরিচালনা পদ্ধতির দুরবস্থা তুলে ধরেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, বিকল্প ধারা সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতা ও নাগরিক সমাবেশের সদস্যরা। বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন, স্বাধীনতা আনতে এত মূল্য দিতে হয়েছে; তার মূল্যবোধ কেন আজ পদদলিত। মা-বোনেরা কেন আতঙ্কে থাকবেন, গুম-রাহাজানি নিয়ে কেন শঙ্কায় থাকতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতিকে কেন ‘স্পিড মানি’ বলে সরকারীকরণ করা হলো। নিরাপদ সড়কের জন্য কেন কিশোরদের রাস্তায় নামতে হলো। কোটা সংস্কারের জন্য কেন মেধাবীদের আন্দোলন করতে হবে। ছাত্রদের কী অপরাধÑ তাদের গুণ্ডা দিয়ে, হাতুড়ি দিয়ে, চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হবে। ড. কামাল বলেন, দেশের মানুষ স্বৈরশাসনের অবসান চায়, ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়, মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই। তারা সুশাসন দেখতে চায়, একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল সমাজ নিশ্চিত করতে চায়।’ সরকারের শাসনের অবনতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, অন্যান্য নেতারা নাগরিক সমাবেশে তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
ঐক্যপ্রক্রিয়ায় সমাজের রাজনৈতিক সচেতন প্রায় সব পক্ষের উপস্থিতি ছিল। তাদের বক্তৃতার মূল সুর ছিল গণতন্ত্র বিপদগ্রস্ত, মানুষের স্বাধীনতা লুণ্ঠিত, জীবনের নিরাপত্তা বড় ধরনের আশঙ্কায় রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের উপলব্ধি হলো একটি স্ষ্ঠুু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা বহাল করতে হবে। তাদের সবার বক্তব্যে একই ধরনের আশঙ্কা, একটি একতরফা অর্থহীন নির্বাচন আবারো অনুষ্ঠিত হলে, দেশের শাসনপদ্ধতির আরো অবনতি হবে। সে জন্য তারা জোর দিয়েছেন যথাসময়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার ওপর। এ প্রক্রিয়ায় দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঐক্যপ্রক্রিয়ায় একত্রিত হয়েছে। মঞ্চ থেকে সরকারি দলের প্রতিও আহ্বান রাখা হয়েছে, তারা যেন ঐক্যপ্রক্রিয়ায় একীভূত হয়। একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে দেয়। আমরা মনে করি, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠন নিয়ে জাতি অনিশ্চয়তায় রয়েছে। জাতীয় ঐক্যের যে ডাক এসেছে, সরকার তার প্রতি সাড়া দিয়ে এ অনিশ্চয়তা দূর করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement