২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রেড জোনে সাত ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে

-

কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বিগ্ন সাতটি ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার ব্যাপারে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তিনটি সরকার পরিচালিত ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে, এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সময়ের সাথে ক্রমেই বাড়ছে, কমছে মূলধন ও মুনাফা। এসব ব্যাংক এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) রিপোর্টে ‘রেড জোনে’ রাখা হয়েছে। এ ব্যাংকগুলো হচ্ছেÑ সোনালী, রূপালী ও বেসিক এ তিনটি সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে আছেÑ ফারমার্স, বাংলাদেশ কমার্স এবং এবি ব্যাংক। আর রয়েছে বিদেশী ব্যাংক ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট’ (এফএসডি) বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি-সুপারিশ করে এবং ইনস্পেকশন ডিপার্টমেন্ট গ্রহণ করে বিশেষ সুপারভাইজরি ও রেগুলেটরি পদক্ষেপ, যাতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণয়ন করে আসছে অর্ধবার্ষিক বিএইচআই রিপোর্ট। এই রিপোর্টের ভিত্তি ছয় মাসের আর্থিক সূচক, সম্পদের ইকুইটি, ক্যাপিটাল এডিকুয়ারি রেশিও এফিসিয়েন্সি, প্রফিটেবিলিটি, লিকুইডিটি এবং মূলধনের বিপরীতে ঋণদানের অনুপাত।
যেসব ব্যাংক এসব সূচকে ভালো করে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় ‘গ্রিন’ ক্যাটাগরিতে। আর যেগুলো সবচেয়ে খারাপ করে সেগুলোকে ফেলা হয় ‘রেড জোনে’। গ্রিন ক্যাটাগরি ও রেড জোনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানকারী ব্যাংকগুলোকে রাখা হয় ইয়েলো জোনে। উল্লিখিত রেড জোনের সাতটি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ কমার্স, ফারমার্স ও রূপালী ব্যাংক সাম্প্রতিক কোয়ার্টারগুলোয় সর্বনিম্ন মূলধন জোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সাতটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এসব ব্যাংক ঋণদানের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে বেশ কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে। সাম্প্রতিক বছরে বেশির ভাগ ব্যাংকে এসব কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এসব অনিয়মের কারণে এসব ব্যাংককে রেড জোনে যেতে হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিমত। সর্বশেষ প্রণীত বিএইচ রিপোর্ট তৈরি করা হয় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। এ প্রতিবেদনে ৩২টি ব্যাংক রয়েছে ইয়েলো জোনে এবং ১৪টি রয়েছে গ্রিন জোনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এফএসডি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে ইয়েলো জোনের আরো সাতটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তত্ত্বাবধান করতে। কারণ এগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি সম্প্রতি আরো খারাপের দিকে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বিএইচআই রিপোর্টে। কারণ এগুলোর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সীমান্ত ব্যাংককেও এ রিপোর্টের বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ এটি লাইসেন্স পেয়েছে ২০১৬ সালে।
আমরা মনে করি, সামগ্রিক ব্যাংক খাতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন ধরে চলছে, সেগুলো একটি সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নিয়মনীতির আওতায় আনায় আন্তরিক চেষ্টা করলে গোটা ব্যাংকখাতে যাবতীয় অনিয়ম বন্ধ হবে, আমরা পাবো সুশৃঙ্খল ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement