২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আজ পবিত্র আশুরা

ন্যায় ও সত্যের প্রশ্নে আপস নয়

-

বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র আশুরা। ইসলামি পঞ্জিকা বা হিজরি বর্ষের পয়লা মাস মহররমের ১০ তারিখে বিশ্বের মুসলমান যথাযথ মর্যাদার সাথে অতীব গুরুত্ববহ এ দিনটি পালন করে থাকে। ১০ মহররমে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মানবজাতির ইতিহাসে। তবে গত চৌদ্দ শ’ বছরে কারবালার মর্মন্তুদ উপাখ্যান আশুরাকেন্দ্রিক আলোচনায় একটি মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তখনকার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের কারণে আশুরার দিবসে কারবালায় হোসেন রা:-এর শাহাদতের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা এতটুকু হ্রাস পায়নি। ইসলামের স্বার্থে তিনি শিশুপুত্র ও সহচরসমেত জীবন বিলিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের নজির রেখে গেছেন। তবুও জালিম শাসকের স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত করেননি। তাই অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রাম করে যাওয়ার চিরকালীন আহ্বান হচ্ছে আশুরার প্রধান মর্মবাণী।
সেই প্রাচীনকাল থেকে আশুরার পবিত্র দিনে আল্লাহ তায়ালা এমন অনেক ঘটনা সংঘটিত করেছেন, যা বিশেষত ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা আবশ্যক। অতীত থেকেই নামাজ-রোজাসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা আশুরা পালন করে আসছেন। জানা যায়, আশুরার দিনটিতে যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, তার মধ্যে আছেÑ প্রথম মানব আদম আ:-এর তাওবা কবুল হওয়া, মহাপ্লাবন থেকে নূহ আ:-এর মুক্তি, সদলবলে জালিম ফেরাউনের নীল নদে নিমজ্জিত হওয়া এবং এভাবে মূসা আ: ও তার অনুসারীদের মুক্তিলাভ, মাছের পেট থেকে ইউনূস আ:-এর মুক্তি, ইব্রাহিম আ:-এর জন্ম, কূপের অন্ধকার গহ্বর থেকে ইউনূস আ:কে উদ্ধার, ইয়াকুব আ:-এর দৃষ্টিশক্তি প্রত্যাবর্তন, দাউদ আ:-এর তাওবা কবুল, ঈসা আ:-এর জন্ম এবং আকাশে উত্থান, আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল সা:-এর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমাপ্রাপ্তি প্রভৃতি। এ দিনেই আইয়ুব আ:-এর দীর্ঘকালীন ও জটিল অসুস্থতার অবসান, সুলাইমান আ:কে রাজত্ব ফিরিয়ে দেয়া এবং ইদ্রিস আ:কে জীবিতাবস্থায় আসমানে তুলে সম্মান প্রদানের ঘটনাও ঘটেছিল।
মহররম তথা আশুরার রোজা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময়। মহানবী সা: বলেছেন, ‘মাহে রমজানের পরে মহররম মাসের রোজা ফজিলতের দিক দিয়ে আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহি মুসলিম)। তিনি আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর দরবারে আমার প্রত্যাশা, যেন আশুরার রোজা তাঁর কাছে আগের বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে গণ্য হয়।’ (সহি বুখারি ও তিরমিজি)।
প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও কবি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর বলেছেন, ‘কতলে হোসাইন আসল মেঁ মর্গে ইয়াজিদ হ্যায়/ ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ’ (হোসেন রা:-এর হত্যাকাণ্ড আসলে ইয়াজিদেরই মৃত্যু। প্রতি কারবালার ঘটনার পরে ইসলাম প্রাণ ফিরে পায়)। অর্থাৎ ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যানুসারী সাহসী সংগ্রামী হজরত হোসেন রা:কে হত্যার মাধ্যমে মূলত অত্যাচারী-একনায়ক ইয়াজিদের মিথ্যা ধ্যানধারণা তথা অন্যায়-অনাচারেরই পরাজয় ঘটেছে। কারবালার মতো ট্র্যাজেডিগুলোতে অপরিমেয় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করার মধ্য দিয়ে ইসলামের অনুসারীরা তাদের আদর্শিক নবজীবন লাভ করেন। এভাবেই যুগে যুগে ইসলামের বিপ্লবী চেতনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
মহান আশুরার শিক্ষা হলো, জীবনের সর্বস্তরে যেকোনো মূল্যে আল্লাহপ্রদত্ত আর রাসূল সা:-এর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ইসলামকে দুনিয়ায় বিজয়ী আদর্শরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আজ আত্মসমালোচনা করা উচিত, আশুরা নিছক দায়সারাভাবে পালিত হচ্ছে কি না। মনে রাখতে হবে, সর্বোচ্চ মাত্রার ত্যাগের মাধ্যমে ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের যথাসাধ্য প্রয়াসেই আশুরা পালনের সার্থকতা নিহিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement