২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গতবারের অর্ধেক ইলিশও পাননি জেলেরা

কারণগুলো দ্রুত দূর করা জরুরি

-

আড়াই মাস আগে দেশে ইলিশ ধরার মওসুম শুরু হয়েছে। তবে দেশের নদ-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ নেই। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় মৎস্যজীবীরা আশায় ছিলেন, পানির চাপ বাড়লে সাগর থেকে নদ-নদীতে দলে দলে ইলিশ ঢুকবে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদেরও বিশ্বাস ছিল এটাই। চলতি ইলিশ মওসুম শেষ হয়ে এলেও গত বছরের তুলনায় অর্ধেক ইলিশও ধরা যায়নি। ফলে মৎস্যজীবীসহ যারা রুপালি ইলিশের ওপর নির্ভরশীল এবং যারা এ বিষয়ে গবেষণা ও নীতিনির্ধারণে সম্পৃক্ত, তাদের সবার উদ্বেগ বাড়ছে।
একটি জাতীয় দৈনিকের বরিশাল প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ইলিশের তিন ভাগের দুই ভাগই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। এবার হঠাৎ ইলিশের বিরাট অংশ যেন উধাও হয়ে গেছে। মনে করা হচ্ছে, গভীর পানির খোঁজে ইলিশ নতুন গতিপথ অনুসরণ করছে। ফলে সাগর থেকে নদ-নদীতে আসছে কম। অপর দিকে, সাগরেও ইলিশ ধরা পড়ার হার কমেছে। জুলাই মাসের শুরু থেকে বারবার নিম্নচাপ ও লঘুচাপে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় ইলিশ ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে। ১ জুলাই মওসুম শুরু হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম দিকে ইলিশ ধরার চলমান মওসুমের সমাপ্তি ঘটবে। এবার ভরা মওসুমেও ইলিশ সংগ্রহের পরিমাণ হতাশাজনক। অথচ জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেই বার্ষিক টার্গেটের ৬০ শতাংশ ইলিশ পাওয়ার কথা।
মৎস্য অধিদফতর জানায়, জুলাইতে বরিশাল বিভাগে ইলিশ আহরিত হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ টন। তদুপরি, এই ইলিশের সাইজও উল্লেখযোগ্য নয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৭৪ টন। ২০১৬-এর একই মাসে ১৬ হাজার ৭৭৫ টন ইলিশ ধরা হয়েছিল। গতবার আগস্টে ২৪ হাজার ২৯৭ টনের মতো ইলিশ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। এবার ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৮ দিনে এর পরিমাণ ২০ হাজার ৪৬৫ টনের মতো। একজন মৎস্য কর্মকর্তা জানান, গত বছরের চেয়ে অর্ধেকেরও কম বৃষ্টি হয়েছে এবার। বরিশাল বিভাগে গতবার জুলাই মাসে ৬৪৫ মিলিমিটার এবং পরের মাসে ৪৪৩ মিলিমিটার বর্ষণ হয়েছিল। এ বছর এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৩১ ও ২০৩ মিলিমিটার। ইলিশ সাগর ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর দিকে আসতে থাকে বৃষ্টি হলেই। এখন সাগরে ইলিশ প্রচুর থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়ে জেলেরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ট্রলার চালকরা জানান, গতবারের এক-চতুর্থাংশ ইলিশও এ বছর পাওয়া যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাঁদপুরের ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন। তার বক্তব্যÑ ‘পদ্মা ও মেঘনার মতো বড় নদীতেও যেভাবে নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে, তাতে ইলিশ গভীর পানির সন্ধানে গতিপথ বদলে ফেলতে পারে। চাঁদপুর, ভোলা ও বরিশালে ইলিশের কয়েকটি অভয়াশ্রমে নদ-নদীর নাব্যতা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে।’ এই বিজ্ঞানীর মতে, অভয়াশ্রম এলাকায় পদ্মা সেতু ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে ইলিশের চলাফেরা বিঘিœত হচ্ছে।
ইলিশের আহরণ অনেক কমে যাওয়া এবং এর বিচরণের অনুকূল পরিবেশ না থাকা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট নদ-নদীর পরিকল্পিত ও নিয়মিত খনন এবং ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণসহ পর্যাপ্ত উদ্যোগ অবিলম্বে নেয়া হবে। অন্যথায় ইলিশা আহরণ ক্রমেই কমতে থাকবে। এতে আমরা যে নানামুখী সমস্যায় পড়ব, তা সহজেই বোধগম্য।


আরো সংবাদ



premium cement