১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিবি পরিচয়ে ৫ জনকে তুলে নিলো

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কত

-

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব দেশের মানুষকে সেবা দেয়া। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ দেশে বসবাস করতে পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঘটছে বিপরীত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করবে জনগণ, এমন প্রত্যাশা অনেকটা দুরাশা। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী দেখলে সাধারণ মানুষ ভয় পায়। সাধারণভাবে মানুষের মনে এ ভয় কাজ করে, পুলিশের সাথে জড়ালে ঝামেলায় পড়তে পারেন তারা। শিকার হতে পারেন হেনস্তার। এ ক্ষেত্রে বিশেষ বাহিনীগুলোর ব্যাপারে মানুষের ভীতি যেন আরো বেশি। বিশেষ বাহিনী তৈরি হয় বিশেষভাবে সেবা পাওয়ার জন্য। এ ধরনের একটি বাহিনী পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এই ডিবির বিরুদ্ধে প্রায়ই গুরুতর অভিযোগ উঠছে। এদের নামে সাদা পোশাকে সাধারণ মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যখন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এরা নিজেদের পরিচয় পেশ করে। দুর্ভাগ্য, এর পরে এদের আর পরিচয় পাওয়া যায় না। অর্থাৎ যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আর যারা নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়েছে তাদের কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েক দিন আগে এ ধরনের আরেকটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রাজধানীর বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনকে তুলে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে চার দিন ধরে স্বজনেরা তাদের সন্ধান না পেয়ে পরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেনÑ ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী শফিউল আলম, তার ছোট ভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল আলম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো: আবুল হায়াত। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ ও নবম শ্রেণীর মাদরাসাশিক্ষার্থী মোশারফ হোসাইন মায়াজ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শফিউলের মা জানান, হজ পালন শেষে ১২ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বাড়ি পৌঁছার জন্য তিনি একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন। একদল অপরিচিত লোক এ সময় তার দুই ছেলেকে তুলে নেয়ার জন্য টানাহেঁচড়া করে। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকেরা এগিয়ে আসে। এ সময় অপরিচিত লোকেরা নিজেদের ডিবি পরিচয় প্রদর্শন করে। তখন মা তার ছেলেদের ‘কী অপরাধ’ জানতে চান। কিছু না বলে তারা মায়ের দুই ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। সাথে থাকা ছেলেদের বন্ধুকেও তারা তুলে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে শফিউলকে নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে সেখান থেকে তাদের দুই বন্ধু শফিউল্লাহ ও মোশাররফকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আত্মীয়স্বজন স্থানীয় থানা ও ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তাদের কোনো খোঁজ পায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে এভাবে সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলছে।
নিখোঁজের ঘটনায় বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা যখন ঘটে, ডিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় তারা প্রকাশ করে। এতে করে সাধারণ মানুষ এসব ঘটনার চ্যালেঞ্জ করার সাহস পায় না। কিন্তু ঘটনা যখন সাঙ্গ হয়ে যায়, তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনা যদি একবার বা দুইবার ঘটত, সেটি মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। এগুলো কোনো-না-কোনো থানার আওতাধীন এলাকা বা বিশেষ বাহিনীর কর্ম এলাকার মধ্যে ঘটছে। দুর্ভাগ্য, ভুক্তভোগীরা যখন নিজেদের আত্মীয়স্বজনের সন্ধানে যাচ্ছেন তারা কেউ দায় শিকার করছেন না। এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সহ্য করা যায় না। এ জন্য সবচেয়ে বেশি দায় সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হলেও তাদের নির্বিকার থাকতেই দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা না করে থাকে, তবে কারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে এমন কর্ম করছে, তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

 


আরো সংবাদ



premium cement