১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঋণখেলাপি রাঘববোয়ালেরা অধরা

আর কতকাল এভাবে চলবে?

-

ঋণখেলাপি সংস্কৃতি। একে সংস্কৃতি না বলে অপসংস্কৃতি বলাই শ্রেয়। এই অপসংস্কৃতি চলে আসছে দেশে দীর্ঘকাল থেকে। তবে সময়ের সাথে এর তীব্রতা বাড়ছে। বাড়ছে এর বিস্তৃতি। এই অপসংস্কৃতি রোধের দায়িত্ব যাদের, মোটাদাগে সে দায় সরকার পক্ষের, আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের, কিন্তু এরা তা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার সুযোগে এই ঋণখেলাপির জন্য দায়ী রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে বরাবর অধরা। এর ফলে অবসান ঘটছে না ঋণখেলাপি সংস্কৃতির।
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিক এর শীর্ষ প্রতিবেদনে জানিয়েছেÑ সমাজের সব ক্ষেত্রে এখন রাঘববোয়ালেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনোভাবেই কেউ তাদের টিকিটি পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারছে না। গত বুধবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ঋণখেলাপি তালিকায় এর প্রমাণ মিলেছে। যারা সমাজে বড় বড় ঋণখেলাপি ও ব্যাংক জালিয়াত হিসেবে পরিচিত, তাদের নাম এ তালিকায় নেই। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে ও আইনের ফাঁক গলিয়ে এরা পার পেয়ে গেছেন। এমনটি মনে করেন ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকদের অনেকে। পত্রিকাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খেলাপি হওয়ার কারণ থাকা সত্ত্বেও যোগসাজশের মাধ্যমে ব্যাংক কৌশলে প্রভাবশালীদের খেলাপির বাইরে রেখেছে। সঙ্গত কারণেই জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ১০০ শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা এখন বিতর্কিত। এভাবে বড় বড় জালিয়াতকে আড়াল করে রাখার ফলে ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করার মতো সরকারের ভালো উদ্যোগটিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
গত বুধবার সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তালিকায় কোন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কত, তা প্রকাশ করা হয়নি। এই তালিকায়ও যারা বড় বড় ঋণখেলাপি তাদের নাম আসেনি। এর ফলে তখনো এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এ দিকে, এবারো যেসব ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ব্যাংক খাতের চিহ্নিত রাঘববোয়ালেরা নেই। তাদের বাদ রেখেই ওই তালিকা করা হয়েছে। মূলত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, আইনের ফাঁক গলিয়ে, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে বা ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তাদের নাম এই তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপিসহ সব ধরনের অপকর্মের দায় অর্থমন্ত্রীকে নিতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের অনিয়মের দায় অর্থমন্ত্রী কিছুতেই এড়াতে পারেন না। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সদস্যদের ঋণখেলাপি হওয়া খুবই উদ্বেগজনক। এতে বোঝা যায়, ঋণের নামে ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়েছে। যারা সংসদে আইন প্রণয়ন করেন, তারাই যদি আইন লঙ্ঘন করেন, তা হলে কার জন্য এ আইন? কে মানবে এ আইন?
আমরা মনে করি, ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্য ছাড়া এ ধরনের রাঘববোয়ালেরা অধরা থাকতে পারেন না। তাই খোদ সরকার এই ঋণখেলাপ চলতে দেয়ার দায় এড়াতে পারে না। এ ধরনের রাঘববোয়ালদের কারণে আজ গোটা ব্যাংক খাত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যাংকের প্রতি আগের মতো সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। আমরা আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাংক খাতকে ঋণখেলাপির অপসংস্কৃতি থেকে বের করে আনবে এবং এর জন্য দায়ী রাঘববোয়ালদের শাস্তির আওতায় আনবে।


আরো সংবাদ



premium cement