১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন

বিএসএফের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই

-

দেশে দেশে সীমানা আঁকা হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এক একটি জাতি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। রাষ্ট্রের সীমানা প্রহরার বিষয়টি অনেক সময় চরম বাড়াবাড়ির দরুন কখনো কখনো যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। তবে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের সীমানা অনেকটা শান্ত রয়েছে। কিন্তু কিছু সীমান্ত রয়েছে, সেখানে পারস্পরিক শত্রুতা ও বৈরিতা প্রদর্শন করা হয়। এ ধরনের একটি সীমান্ত হলো, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এখানে প্রায়ই নিরস্ত্র নিরীহ বাংলাদেশীদের লাশ পড়ে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিএসএফ বা ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর আচরণে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।
এবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সম্মেলনে বরাবরের মতো বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে। আবারো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি গার্ড (বিএসএফ) সীমান্ত হত্যা শূন্যপর্যায়ে আনতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এ ছাড়া দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত বাহিনী ৯টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও অপরাধ দমন করতে দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেছে। সীমান্তে অপরাধ দমনের জন্য সুস্পষ্ট নৈতিক দৃঢ়তা দরকার। এমনিতেই প্রচুর চোরাচালান হয়ে থাকে। উভয় বাহিনী নিজের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করলে এমন চোরাচালান হতে পারে না। চোরাচালানের প্রধান বিষয় হলো মাদক, মানবপাচার ও জাল নোট পাচার। অভিযোগ রয়েছে, এসব বাহিনীর সাথে যোগসাজশ করে এগুলো পাচার হয়ে থাকে। সম্মেলনে এবারো বিজিবি-প্রধান বাংলাদেশী হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর জবাবে বিএসএফ-প্রধান আগের মতোই দাবি করেছেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া’ ভারতীয় বাহিনী মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে না। তিনি বলেন, সশস্ত্র অপরাধীরা আক্রমণ করলেও বিএসএফ ‘সংযত’ ব্যবহার করছে। সত্যিই তারা নমনীয় আচরণ যদি করেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বৈকি। কিন্তু গত কয়েক বছরে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা ও নির্যাতনের চিত্র ভিন্ন বাস্তবতাই তুলে ধরে। সম্মেলনে ভারতীয় পক্ষ আশঙ্কা করছে, রোহিঙ্গারা ভারতে প্রবেশ করতে পারে। তাহলে তাদের গ্রেফতার করে বিজিবির হাতে তুলে দেয়া হবে। এতে করে এটাই বুঝানো হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি কেবল বাংলাদেশীদের দায়িত্ব রয়েছে। মানবপাচারের যারা শিকার, তাদের দ্রুত উদ্ধার করার অঙ্গীকার করা হয়েছে সম্মেলনে। বলা হয়েছে, তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হবে।
দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করে সীমান্ত বাহিনীর আচার-আচরণের ওপর। কিন্তু আমরা দেখেছি, ফেলানীর হত্যার মতো নিষ্ঠুরতা। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় বাহিনীর হাতে শত শত বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছে। এমন সীমান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। প্রতিবেশী দেশের মানুষের প্রতি মানবিক দায়িত্ববোধ না জন্মালে বিএসএফ সম্মেলনে যে ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিএসএফ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এখন থেকে সেটি বাস্তবায়ন শুরু করলে বিরাট পরিবর্তন আশা করা যায়। বাংলাদেশীরা প্রত্যাশা করে, বিএসএফ সীমান্তে আর শত্রুতামূলক আচরণ এবং ফেলানীর মতো আর কাউকে নির্মমভাবে হত্যা করবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement