২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন

টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন

-

পদ্মার ভাঙন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কোনো এলাকায় বেশি ভাঙে, কোনো এলাকায় কম। সম্প্রতি নড়িয়ায় অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে পাঁচ দিনে ২০০ বছরের পুরনো মূলফৎগঞ্জ বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন-ঝুঁকিতে পড়েছে পুরনো এ বাজারের আরো আট শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে নড়িয়া উপজেলার একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও বাজারসংলগ্ন জামে মসজিদটি। এ ব্যাপারে কোনো কাজে আসেনি সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তীরে ফেলানো জিও ব্যাগ। প্রতিদিনই বিলাসবহুল বাড়িঘরসহ শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়ায় পদ্মার পাড়ে চলছে আহাজারি। পদ্মার ভাঙনে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে হাজার হাজার পরিবারের জীবন সংসার।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ বছর নড়িয়া উপজেলার প্রায় চার হাজার পরিবারের বাড়িঘর ফসলি জমি ভাঙনকবলিত। পদ্মার তীরের লোকজনের চোখে কোনো ঘুম নেই। তারা দিনরাত তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও চোখের সামনেই বিলীন হচ্ছে সব কিছু। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হলে এখনো নড়িয়া বাজার, ঐতিহ্যবাহী মূলফৎগঞ্জ মাদরাসা কমপ্লেক্স রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
এ বছর বর্ষা মওসুম থেকে পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণে এক কিলোমিটার চলে এসেছে। চারটি ভবনসহ দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একেকটি ভবন ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলো চোখের সামনে বিলীন হলেও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় ভাঙনপীড়িত ক্ষতিগ্রস্তরা।
ক্ষতিগ্রস্তরা মনে করেন, এলাকার সর্বস্বহারা মানুষগুলো একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজলেও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তারা বর্ষার আগেই চেয়েছিল পদ্মার দক্ষিণ তীরে নড়িয়া উপজেলা শহর এবং পুরনো এ মূলফৎগঞ্জ বাজারটি রক্ষায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ মোটেও ভাবতে চায়নি।
অজানা কারণে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বর্ষার শুরু থেকে অব্যাহত ভাঙন শুরু হলে পাঁচ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় ভাঙন রোধে তা কোনো কাজেই আসেনি।
ইতোমধ্যে হাসপাতালের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের রোগীদের পাশের একটি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বাজার, হাসপাতালসহ আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ। বাস্তবে গত দুই মাসে পদ্মার ভাঙনে প্রায় চার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের রোগীদের জন্য ভবনের দক্ষিণ পাশের আবাসিক দু’টি ভবনে ভর্তি কার্যক্রম এবং জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে প্রায় আড়াই হাজার ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শিগগিরই ৩৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দুই বান্ডিল করে টিন ও ছয় হাজার করে টাকা বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
আমরা মনে করি, ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে এই ভাঙন রোধ করা যাবে না। এ ব্যাপারে মহাপরিকল্পনা জরুরি। এ ছাড়া নদী শাসন ও বাধ নির্মাণ সমস্যার কিছু সমাধান এনে দিতে পারে। আশা করি, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement