২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সত্য কখনো চাপা থাকে না

মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচার করতে হবে

-

অপরাধী সব সময় তার অপকর্ম ঢাকতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। অপরাধ আড়াল করতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। তবু শেষ রক্ষা হয় না। তার সব অপচেষ্টা অবশেষে রূপ নেয় ব্যর্থতায়। একসময় তা জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়ে। কথায় বলে, অপরাধী তার অপরাধের কোনো-না-কোনো চিহ্ন রেখে যায়। এটাই ফের সত্য হয়ে সামনে এসে হাজির হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। কিছু সময়ের জন্য তা ঢাকা যেতে পারে, তবে স্থায়ীভাবে নয়। সত্যের অন্তর্নিহিত শক্তি হচ্ছে, তা অবিকৃত অবস্থায় সম্পূর্ণ প্রকাশিত ও প্রমাণিত হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সত্য আড়াল করতে গিয়ে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়েছে। এটাই অত্যাচারীদের অনিবার্য নিয়তি।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে এবার একটি বইয়ে একাধিক ভুয়া ছবি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের সত্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনে দেশটি যে চাপে পড়েছে, সেনাবাহিনীর ক্ষমা চাওয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। মূলত, রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের চেষ্টাই চালিয়েছে তারা।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপত্র সোমবার ‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো : পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটিতে প্রকাশিত দু’টি ছবির জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ২৭ আগস্ট জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে মিয়ানমারের জেনারেলদের গণহত্যা হিসেবে মন্তব্য করা হয়। এক সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বইতে ইতিহাসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জুলাইয়ে বইটি প্রকাশ করেছিল যেখানে অন্য দেশের পুরনো দু’টি ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আরেকটি ছবির ক্যাপশনে দেয়া হয় ভুয়া তথ্য। রয়টার্স দেখতে পায়, ওই ছবি আসলে তোলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, যখন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল দখলদার বাহিনী। ঝাপসা হয়ে আসা আরেকটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ গাঁটরি-বোঁচকা নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে কোথাও যাচ্ছেন। ক্যাপশনে বলা হয়, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মিয়ানমারের দক্ষিণ অংশ দখল করে নেয়ার পর বাঙালিরা এ দেশে প্রবেশ করে।’ রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডায় তোলা একটি রঙিন ছবি বিকৃত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তা ব্যবহার করেছে অসদুদ্দেশ্যে।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমার অযোগ্য যে অপরাধ করছে, তা ঢাকতে ফের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচার ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর এ জন্য ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যেসব জেনারেল রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত, তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিশ্ব-সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাব, দ্রুত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তাদের যথাযথ মর্যাদায় স্বদেশে ফেরার উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারকে যেন বাধ্য করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement