২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত

বন্ধ করার উদ্যোগ নেই

-

পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে এক নজিরবিহীন লাশের রাজনীতি দেখা যাচ্ছে। সেখানকার বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৯ জনই পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি প্রধান দলের নেতাকর্মী। গত শনিবার এ ধরনের একটি ঘটনায় এবার একসাথে সাতজন প্রাণ হারালেন। এদের মধ্যে তিনজন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা। পাহাড়ে খুন, গুম ও অপহরণের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারের পুলিশফাঁড়ির কাছেই এলোপাতাড়ি গুলিতে তারা নিহত হন। পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যে ব্রাশ ফায়ারের ঘটনার কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না, বরং আশঙ্কা হচ্ছে পাহাড়ে আরো বড় ধরনের সঙ্ঘাতের।
ব্রাশ ফায়ারের ঘটনার পর প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে ইউপিডিএফ মুখপাত্র খাগড়াছড়ির সংগঠক মাইকেল চাকমার কাছ থেকে। তিনি একটি পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেছেন, শনিবারের ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে জনসংহতি সমিতি এম এন লারমা এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের দু’টি প্রতিপক্ষ সংগঠন। বরাবরের মতো সংগঠন দু’টি তাদের প্রতি আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিপক্ষকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে সেখানে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত আছে। পার্বত্য এলাকায় মূলত এই সংগঠনগুলোর জাল বিস্তৃত। যেকোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা দৃশ্যত তারাই রাখেন। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে অরাজক পরিস্থিতি কারা তৈরি করছে, সেটি বহু আগে থেকেই জানা। সরকারের পক্ষ থেকে একটি পক্ষের সাথে চুক্তির মাধ্যমে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হলেও সেটিতে কোনো পক্ষ শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তবে পার্বত্য অঞ্চলকে নির্ভর করে গড়ে ওঠা দলগুলোর মধ্যে নানা কারণে বিভাজন দেখা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র গ্রুপ। এদের অনেকে বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিরোধে রক্তপাতের নতুন ধারা শুরু হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে। সেই থেকে প্রায় সময়ই অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। প্রতি মাসে নিজেদের মধ্যে ব্রাশ ফায়ারে কেউ-না-কেউ হত্যার শিকার হয়েছেন। সেখানে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ৮-৯ মাস ধরেই চলছে। একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে অপরাধীরা বিচারের আওতায় এসেছে, এমন লক্ষ করা যাচ্ছে না। আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন ঘটনার সূত্রপাত হচ্ছে। এর পেছনে চাঁদাবাজির সংযোগ রয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, পার্বত্য অঞ্চলে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সাথে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে। অথচ এ ধরনের প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা দায়ী, সেটি বের করা যাচ্ছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম একটি ভৌগোলিক এলাকা। এখানকার জনবসতি নিয়ে নানান সময় বিতর্ক উঠেছে। একসময় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তার অবসান হলেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। এখন পাহাড়ি সংগঠনগুলো বিভক্ত হয়ে নানান স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে রক্তপাত শুরু করেছে। এতে করে কেবল এসব সংগঠনের নেতারাই প্রাণ হারাচ্ছেন না, সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যাচ্ছে। অন্য দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে একধরনের অস্থির অবস্থা। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী বিরোধ থেকে সরে এসে সমঝোতা করবে, তার কোনো লক্ষণ নেই। তবে সরকারের উচিত যারা অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। অপরাধীদের কঠোরভাবে দমন করা।  


আরো সংবাদ



premium cement