২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
‘হাতি বাঁচাতে রেলের আন্ডারপাস জরুরি’

সব প্রকল্পই প্রকৃতিবান্ধব হতে হবে

-

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে চুনতি অভয়ারণ্যে প্রস্তাবিত রেলপথের ওপরই বন্যহাতি চলাচলের করিডোর। একইভাবে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী অভয়ারণ্য এবং মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে হাতি আসা-যাওয়ার করিডোরের ওপর দিয়ে কক্সবাজার যাবে এই রেলরুট। এ পরিস্থিতিতে রেল প্রকল্পটির প্রায় ২৭ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা হাতির মারণফাঁদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। জানা দরকার, নির্মীয়মান এই রেললাইনের আওতায়, পাহাড়ের মধ্যে হাতির আবাস ও যাতায়াতের পথ রয়েছে কমপক্সে ২১টি পয়েন্টে।
একটি সহযোগী দৈনিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পে ১২৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৭ কিলোমিটার পড়েছে দু’টি অভয়ারণ্য ও একটি প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যানের মধ্যে। কিন্তু এত বড় এলাকায়ও হাতিসহ বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বনের নানা ধরনের প্রাণীর স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে রেললাইনে আন্ডারপাস ও বক্সকালভার্টের মতো বিকল্প ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ না থাকায় পরিবেশ সচেতন মানুষেরা উদ্বিগ্ন।
২০১৭ সালে সাত মাস ধরে ক্যামেরা ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে তিনটি বনের ২১টি স্থানে হাতির করিডোরের সন্ধান মিলেছে। রেললাইন চালুর পর এসব পয়েন্টে হাতি অবাধে চলতে না পারলে ক্রুদ্ধ হয়ে লোকালয়ে নেমে এসে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে পারে। তাহলে মানুষের জানমালের বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, আলোচ্য রেললাইনের প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ পড়বে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে। রেল প্রকল্প এলাকায় হাতি চলাচলের পথ শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে গত বছর দু’বার সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। সে মোতাবেক জানা গেছে, হাতির করিডোর বা চলার পথ ও আবাস চুনতি অভয়ারণ্যে ১৩টি, ফাঁসিয়াখালী অভয়ারণ্যে সাতটি ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে একটি। গবেষকেরা ক্যামেরার মাধ্যমে হাতি ছাড়াও ৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর ২৩২টি গ্রুপ এবং ৩২০ প্রজাতির অন্যান্য প্রাণীকে শনাক্ত করেছেন এসব বনে। এর মধ্যে চুনতি অভয়ারণ্য জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে সর্বাধিক সমৃদ্ধ। আর এখানেই সর্বাধিক হুমকির সম্মুখীন বিপন্ন প্রজাতির হাতি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় হাতি চলাচলের পথ বা করিডোরের উল্লেখ রয়েছে সাইনবোর্ডে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৬টি প্রাপ্তবয়স্ক ও ছয়টি বাচ্চা হাতি রয়েছে চুনতি অভয়ারণ্যে।
এ দিকে, বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কার্যালয় রেল কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, অভয়ারণ্যের যেসব পয়েন্টে রেললাইন তৈরি করা হবে, সেখানে ৮ মিটার উঁচু ও ১০০ মিটার দীর্ঘ আন্ডারপাস, হরিণ এবং ছোট প্রাণীর যাতায়াতের সুবিধার্থে এক কিলোমিটার পরপর আন্ডারপাস এবং সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী চলাচলের জন্য প্রাকৃতিক জলাধারের ওপর বক্সকালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আরো বলা হয়েছে, আন্ডারপাস ও বক্সকালভার্টের দেয়াল উদ্ভিদে ঢেকে দেয়া প্রয়োজন এবং সেখানে ট্রেনের গতি ২০ কিলোমিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়। তদুপরি এলিফ্যান্ট ট্রাকিং কমিটি গঠন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এই রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক দাবি করেছেন, রেলের কারণে বনাঞ্চল আর বন্যপ্রাণীর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য ‘নানা উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে’। সরকারের বন বিভাগ ছাড়াও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক থেকেও এ ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেয়ার কথা তিনি জানান।
প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক আবাস ও জীবনযাত্রা বিনষ্ট করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তাতে শেষ পর্যন্ত অকল্যাণই বেশি হয়ে থাকে। মানুষের স্বার্থেই পরিবেশের অনুকূল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। শুধু রেল প্রকল্প নয়, দেশের সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প যাতে প্রকৃতিবান্ধব হতে পারে, এ জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও সমীক্ষাসহ সরকারকে দূরদর্শী ভূমিকা রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল