২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১৫ আগস্টের শোকাবহ দিবস

বঙ্গবন্ধুর জীবন হোক জাতির দিশারি

-

আজ বুধবার, ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে গভীর শোকাকুল ও বেদনাবিধুর দিবস। আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪৩ বছর আগে এ দিনেই পরিবারসহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নজিরবিহীন এ ট্র্যাজেডি শুধু দেশের একজন প্রেসিডেন্ট নয়, আমাদের জাতীয় স্বাধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতাকে চিরতরে ছিনিয়ে নিয়েছে। এই রক্তাক্ত উপাখ্যান বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এ জাতির ওপর সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। এর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে জাতীয় রাজনীতির গতিপথ।
১৯৭৫-এর মধ্য আগস্টের প্রত্যুষে সংঘটিত আকস্মিক ও মর্মান্তিক সেই হত্যাযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু মুজিব; স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা; তিন ছেলে কামাল, জামাল ও রাসেল; এ ঘটনার মাত্র কয়েক দিন আগে বিবাহিতা পুত্রবধূদ্বয় তথা শেখ কামাল ও শেখ জামালের স্ত্রীরা; বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত; ছোট ভাই শেখ আবু নাসের; ভাগ্নে ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও অতিথি নিহত হন। তাদের মধ্যে শেখ রাসেলসহ ছিল একাধিক শিশু। আজ আমরা পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তাদের সবার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সাথে শোকসন্তপ্ত পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিচিতি দেয়া নি®প্রয়োজন। এ দেশ ও জাতির ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং ইতিহাসে নির্ধারিত অবস্থান থেকে তাকে অপসারণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মুজিব ছিলেন চার দশক বিস্তৃত ও ঘটনাবহুল রাজনীতির বিচিত্র প্রবাহে গড়ে ওঠা সংগ্রামী এক মহীরুহ। শ্বেতাঙ্গ শাসনের ঔপনিবেশিক আমলের শেষ লগ্নে উপমহাদেশের পশ্চাৎপদ মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রকর্মী রূপে তার রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান জন্ম নেয়ার কিছু দিন পর সূচিত গণতন্ত্রের অব্যাহত সংগ্রামে মুজিব নেতৃত্বের ক্রমবিকাশ সাধিত হয়। নানাবিধ নিপীড়ন আর বাধা মোকাবেলা করে একপর্যায়ে তিনি উন্নীত হলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণম্যান্ডেটপ্রাপ্ত নেতায়। বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মুজিব ছিলেন প্রথমাবধি সংগ্রামী সারথি। এ জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমান নিরঙ্কুশ নেতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তাকে প্রধান নেতা হিসেবে গ্রহণ করেই ১৯৭১ সালে পরিচালিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। সাবেক পাকিস্তানের প্রায় সিকি শতাব্দীকালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে মুজিবের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বৈষম্য, নির্যাতন, অবহেলা ও বঞ্চনার সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপটে এ দেশের জনগণ জাতীয়তাবাদের চেতনায় সংগঠিত হয়েছিল পূর্ণ স্বাধিকার ও স্বশাসনের লক্ষ্যে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক অবদান শেখ মুজিবুর রহমানের।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর সূচিত ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব আবির্ভূত হন এ অঞ্চলের সর্বপ্রধান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলেও কেন্দ্রীয় শাসকচক্রের কারসাজিতে প্রাপ্য রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে তারা হলেন বঞ্চিত। এ পরিস্থিতিতে মুজিবের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের গণ-আন্দোলন কার্যত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রের শাসনের অবসান ঘটায়। এ দিকে জনসাধারণ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েমের লক্ষ্যে সোচ্চার ও সরব। এ প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নজিরবিহীন হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডবে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। সে রাতেই মুজিবকে বন্দী করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানের বন্দিশালায় কেটেছে তার জীবন। ১৬ ডিসেম্বর এ জাতির কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জনের কয়েক দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বীরের বেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সে দিন জাতি তাকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়। এর পরপরই তিনি গ্রহণ করেন বাংলাদেশের শাসনভার। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান তার অটুট অবস্থানে স্বমহিমায় বিরাজ করবেন। সচেতন দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা, জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই তার জীবন ও কর্মের সামগ্রিক ও নির্মোহ মূল্যায়ন করা হবে। তাহলেই তার সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা এবং বিজয় ও ব্যর্থতা থেকে সম্যক শিক্ষা গ্রহণ করে এ দেশ ভবিষ্যতে চলার পাথেয় সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে।


আরো সংবাদ



premium cement