১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাগরে মৎস্যজীবীরা নিরাপত্তাহীন

জলদস্যুদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান দরকার

-

বঙ্গোপসাগর নিয়ে অনেক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সাগরে সীমানা সমস্যার সুরাহা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সীমানাবিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। সরকার এ জন্য বিরাট বাহবা দাবি করেছে। তবে অনেকে মনে করেন, সরকারের দুর্বলতার কারণে আমরা আরো বেশি সমুদ্র অঞ্চল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যা হোক, যতটুকু সমুদ্র অঞ্চল আমরা পেয়েছি, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের সমুদ্রের অর্থনৈতিক এলাকাকে এখনো কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
তেল-গ্যাসসহ বঙ্গোপসাগরে যে বিপুল সম্পদ রয়েছে, সেগুলো সংগ্রহে বিশেষ কোনো অগ্রগতি নেই। সনাতনী ধারায় মৎস্যসম্পদ সংগ্রহের কাজ চললেও সে জন্য আমাদের অর্থনৈতিক সমুদ্র অঞ্চলের সম্পূর্ণ অংশ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণের মতো জলযান ও দক্ষ কর্মী আমাদের নেই। গভীর সমুদ্রে অনেক সময় বহিরাগতরা ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। খুব কম ক্ষেত্রেই আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে পারি। বরং আমাদের দেশীয় মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা পর্যন্ত আমরা দিতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রতিবেশী দেশের সরকারি বাহিনী ও জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হন। ট্রলার ও মাছ তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। অনেকে আক্রান্ত হয়ে প্রাণও হারিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
দেশীয় জলদস্যুরাও বড় ধরনের আঘাত হানছে জেলেদের ওপর। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তারা বেপরোয়া নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে। খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ২০ জন নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি তাদের জলযানও খোয়া গেছে। এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে ৩২ জন জেলেকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল সাগরে। এবারে নিখোঁজ হওয়া জেলেদের ব্যাপারেও ধারণা করা হচ্ছে, তাদের হত্যা করেছে জলদস্যুরা। চট্টগ্রামের বাঁশখালীসংলগ্ন এলাকায় ওদের আক্রমণ বেড়েছে। প্রধান টার্গেট হলো অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। এমন জঘন্য অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কোস্টগার্ড রয়েছে। কিন্তু তাদের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। সাগরে জেলেদের জন্য আশঙ্কার আরেকটি ব্যাপার হলো বৈরী আবহাওয়া। ঝড়ঝাঁপটায় পড়ে মাছ ধরার ছোট জলযান ডুবে জেলেরা অনেক সময় প্রাণ হারান। অবশ্য এর চেয়ে বড় আশঙ্কা জলদস্যুদের নিয়ে। কোস্টগার্ডের দায়িত্ব হলো, সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা। সেটি এ বাহিনী করতে পারছে না যে কারণে হোক।
সমুদ্রের বিভিন্ন খনিজসম্পদ আহরণে আমরা প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত থেকে পিছিয়ে রয়েছি। মৎস্য আহরণেও আমরা খুব একটা অগ্রগামী নই। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক চেষ্টা রয়েছে এবং তার ফলে বাজারে সামুদ্রিক মাছের জোগান রয়েছে। কিন্তু মৎস্যজীবীদের জন্য আমরা একটা নিরাপদ সমুদ্র উপহার দিতে পারছি না। জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেলে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে ভাটা দেখা যায়। মোট কথা, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দরকার। যেসব এলাকায় জলদস্যুদের আস্তানা রয়েছে, সেখানে জোরালো অভিযান চালাতে হবে। কোস্টগার্ডকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারা প্রয়োজনে রাষ্ট্রের অন্য বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারে।
আমরা মনে করি, সরকারের এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া দরকার। দরিদ্র জেলেদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রথমে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। পরে এই অভিযানের পর্যাপ্ত ধারাবাহিকতা রাখতে হবে, যাতে করে জলদস্যুরা আর আস্তানা গেড়ে বসতে না পারে।


আরো সংবাদ



premium cement