২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
‘হাতে স্টিয়ারিং, কানে ফোন’

আর কত মৃত্যু বোধোধয় ঘটাবে?

-

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন চালিয়ে গেলেও রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জে যথারীতি ফিটনেসহীন বাস, হিউম্যান হলার ও অটোরিকশার চালকেরা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে গাড়ি চালাচ্ছে। এসব পরিবহনের বেশির ভাগ চালকই শিশু-কিশোর। তাদের শেল্টার দিচ্ছে প্রভাবশালী পরিবহন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা।
একটি সহযোগী দৈনিকে এবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সূচনা হয়েছে কথাগুলো দিয়ে। শুধু কেরানীগঞ্জের চিত্র তুলে ধরা হলেও আসলে দেশজুড়ে সড়ক পরিবহন খাতে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান চরম অনিয়ম-নৈরাজ্যের এটি নমুনা মাত্র। একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, পরিবহনের চালকেরা বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। হেলপার থেকে এরা এখন চালক। অথচ নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এদের মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। অদক্ষ চালকের কারণে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে।
আলোচ্য খবরের সাথে একটি বড় ছবিও ছাপা হয়েছে যাতে দেখা যায়, একজন চালক হাসিমুখে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। তদুপরি, তার নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও পুলিশের চোখের সামনেই এটা ঘটছে। এসব কারণে অহরহ যাত্রীদের মৃত্যু ঘটছে সড়কপথে।
পুলিশ জানায়, গত দুই বছরে ঢাকা-মাওয়া সড়ক, জিনজিরা-নবাবগঞ্জ এবং কোনাখোলা-হেমায়েতপুর সড়কে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন চিকিৎসক ও ছাত্রনেতাসহ ২৫ জন। এ ছাড়া, স্কুল-কলেজের ছাত্রীসহ বেশ কয়েকজন পঙ্গুত্ববরণে বাধ্য হয়েছে। জিনজিরা-নবাবগঞ্জ সড়কে একটি কোম্পানির গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এখানে পাঁচ মাস আগে একজন স্কুল ও একজন কলেজ শিক্ষার্থী সড়কে মারা যাওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘সময় নিয়ন্ত্রণ’ করতে গিয়ে যানবাহন চলাচল করে দ্রুতগতিতে ও বেপরোয়াভাবে। এ অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হওয়ার প্রধান কারণ এটি। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিক দাবি করেছেন, ‘চালকদের সতর্কভাবে চালাতে বলা হয়েছে।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও গাড়ি বেপরোয়াভাবে কিভাবে চলছে এবং দুর্ঘটনায় জড়িত চালকদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, জানা যায়নি।
আরো জানা যায়, কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার ও আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে অর্ধশত হলার রাজধানীর একাধিক রুটে চলছে। এসব যানের চালকেরা মাত্র ১৫-১৭ বছর বয়সী। মাওয়া সড়কেও একই চিত্র। এ ধরনের পরিবহনের কাছে কেরানীগঞ্জের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো। কোনো সময় গাড়ির সঙ্কট হলেই ভাড়া দ্বিগুণ এমনকি এর বেশিও নেয়া হয়। এবার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের মুখে, গণপরিবহনের অঘোষিত ধর্মঘটের সুযোগে অটোরিকশার ভাড়া হয়েছে তিন গুণ। জানা গেছে, ঢাকা-মাওযা মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। অপর দিকে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পেয়েছে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতিদিনই গড়ে অন্তত ১০ জন করে প্রাণ হারাচ্ছেন। দিন দিন মানুষ বাড়ছে, যান বাড়ছে; সেই সাথে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা ও এর ক্ষয়ক্ষতি। হতাহত হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারী; অনেক ক্ষেত্রে চালক-হেলপারও। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। তবুও কমছে না মৃত্যুর এই বেলাগাম ‘মহোৎসব’। ফলে অজস্র পরিবারে আজ কান্না ও আহাজারি। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি সড়কে প্রাণ হারালে তার গোটা পরিবারকে পথে বসতে হয়।
এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত ক্ষয়ক্ষতি দেখেও কেন হুঁশ হয় না বেপরোয়া চালকদের? কেন প্রশাসন সড়ক নিরাপত্তার আইন প্রয়োগে যথেষ্ট তৎপর হচ্ছে না? দুর্ঘটনার নামে সড়ক-মহাসড়কে আর কত মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটলে সরকার, পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিক নেতাদের বোধোদয় ঘটবে?

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল