২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অঘোষিত ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে

ফিরছে ফিটনেসহীন গাড়ি ও লাইসেন্সহীন চালক!

-

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাস মালিক-শ্রমিকদের ‘অঘোষিত প্রতিশোধের ধর্মঘটের’ অবসান ঘটতে যাচ্ছে? যানবাহন চলাচল কিছুটা শুরু হয়েছে। রোববার রাতে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
গত ২৯ জুলাই ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা যানবাহন ও চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে। এতে ধরা পড়ে ফিটনেসহীন হাজারো গাড়ি ও লাইসেন্সহীন গাড়িচালকের ছড়াছড়িসহ পরিবহন খাতে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা নানা অনিয়মের চিত্র। তাদের এই আন্দোলন অভাবনীয় সাড়া জাগায় জনমনে।
এই আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে পরিবহন শ্রমিকদের রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো; কিন্তু সরকারের সায় না পেয়ে তারা বেআইনিভাবে অঘোষিত ধর্মঘটের পথ বেছে নেয়। একধরনের প্রতিশোধের এই ধর্মঘটে মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ে। অপর দিকে, এই অঘোষিত ধর্মঘট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যায়। যা হোক, সোমবার থেকে দৃশ্যত এই ধর্মঘটের অবসান ঘটতে শুরু করেছে। কিন্তু জনমনে জেগেছে নানা প্রশ্নÑ আবারো কি শুরু হবে পুরনো সব অনিয়ম? রাস্তায় চলবে কি আগের সেই লাখ লাখ ফিটনেসহীন গাড়ি? আবারো সড়কে শুরু হবে কি লাইসেন্সহীন গাড়িচালকদের দুঃসহ দৌরাত্ম্য? আবারো রাজপথে যন্ত্রযান পিষে মারবে পথচারীদের? দেশে কি ফিরে আসবে না পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা? এত বড় একটি আন্দোলনের সময়ও প্রতিদিন বেশ ক’জন যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হতে দেখা গেছে। এ থেকেই উপলব্ধি করা যায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা।
জানা গেছে, দেশের সড়কপথে চলাচল করছে লাখ লাখ ফিটনেসহীন গাড়ি। রাজধানীতে প্রতিদিন চলাচল করে ‘চেহারা ঝলসানো’ রঙচটা অসংখ্য গাড়ি। চলতে চলতে কোনোটার ইঞ্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সামনের লুকিং গ্লাস নেই। জানালার নেই কাচ। বৃষ্টি হলে যাত্রীদের সিট ছেড়ে গা বাঁচাতে হয়। গ্রামের সড়কগুলোতে তো অবাধে চলে ফিটনেসহীন গাড়ি। আছে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ব্যবহার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ এসব ফিটনেসহীন যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশের ১২ লাখ গাড়ির মধ্যে পাঁচ লাখই চলাচলের উপযোগী নয়। মোটরসাইকেলের ফিটনেস সনদ নিতে হয় না। এগুলো হিসাবের বাইরে।
বিআরটিএ’র তথ্য মতে, দেশে ১৬ লাখ ৩২ হাজার যানবাহন চালানো হচ্ছে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই। প্রতি গাড়িতে একজন চালক থাকবেন, এ হিসাব করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭০টি; অথচ বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ। এর মানে, ১৬ লাখের মতো গাড়ি রয়েছে লাইসেন্সধারী চালক ছাড়া। আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর না হলে চালকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায় না; অথচ অসংখ্য শিশু-কিশোরকে খোদ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি চালাতে দেখা যায় পুলিশের সামনে। ২০০৯ সালে টিআইবি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দেশে ৯৭ শতাংশ শিশু-কিশোর চালক বড়দের সহকারী হিসেবে গাড়ি চালনা শিখছে। এদের হাতেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায়ই দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় এসব আনাড়ি গাড়ি চালাচ্ছিল। মোটকথা, গোটা পরিবহন খাতে চলছে চরম নৈরাজ্য, যা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সময় ব্যাপকভাবে উদঘাটিত হয়েছে।
আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আহূত অঘোষিত ও বেআইনি পরিবহন ধর্মঘট অবসানের সাথে সাথে এ খাতের যাবতীয় দুর্নীতি, অনিয়ম আর নৈরাজ্যের অবসান ঘটুক। সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement