২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কয়লার পর এবার পাথর চুরি

অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না কেন?

-

বাংলাদেশে চুরির যেন ভরা মওসুম চলছে। চুরি করার সুযোগ এতটাই অবারিত হয়েছে যে, এখন অপ্রচলিত সব জিনিসও চুরি হতে শুরু করেছে। এর আগে এ ধরনের চৌর্যবৃত্তির কথা কল্পনাও করা যেত না। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বিপুল কয়লা গায়েবের পর এখন একই জেলার পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির (এমজিএমসিএল) খনি থেকে তিন লাখ ৬০ হাজার টনের বেশি পাথর গায়েব হয়ে যাওয়ার তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এই পাথরের আনুমানিক মূল্য ৫৬ কোটি টাকা। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে লুটপাটের এক সদর দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। সরকারের প্রতিটি বিভাগে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বারবার লুটপাটের শিকার হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকেও কায়দা করে লুটপাট করা হচ্ছে। বাদ যায়নি অত্যন্ত সুরক্ষিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। বিস্ময়কর হচ্ছে, একটির পর একটি চুরি ও লুণ্ঠন হচ্ছে; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে এখন রাষ্ট্রের অপ্রচলিত সম্পদও চুরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই চাঞ্চল্যকর। এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপকের তদন্ত প্রতিবেদনে পাথর লোপাটের বিষয়টি উঠে এসেছে। আবার এর পাল্টা প্রতিবেদনে পাথর গায়েবের বিষয়টিকেই গায়েব করে দেয়ার ফন্দি দেখা গেল। বোর্ড সভায় বিষয়টি ওঠার পর কোম্পানির পক্ষ থেকে আরেক প্রতিবেদনে এসব পাথর মাটির নিচে ‘দেবে গেছে’ দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তদুপরি, গায়েব হওয়া পাথরের পুরো অর্থ এবং পাথরের পরিমাণ কোম্পানির হিসাব থেকে অবলোপন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ হজম করে ফেলার যে সিস্টেম, যেন সেটাই অবলম্বন করার অপচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন সেক্টরে অপরাধী চক্র বা সিন্ডিকেট শক্ত হয়ে বসেছে। একই গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করছে। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা গায়েবকারী চক্র মধ্যপাড়া থেকে পাথর গায়েব করার সাথে জড়িত। অনেকে আশঙ্কা করছেন, যে পরিমাণ পাথর চুরির কথা প্রতিবেদনে এসেছে, প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। এ ব্যাপারে অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
যারা এমন দুর্নীতি করে দেশের সম্পত্তি গ্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে এই চোরেরা পুরস্কৃতও হচ্ছে। এমজিএমসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরির সাথে অভিযুক্ত। তবুও তিনি কিভাবে আবার পাথর চুরি করার মতো সুযোগ পেতে পারেন? খবরে প্রকাশ, তাকে অনেকটা পুরস্কৃত করা হয়েছে। এবার তিনি হজের নামে ছুটিও পেয়েছেন। চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট আরো দু’জন কর্মকর্তা এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ কেন দুর্নীতি ও লুটপাটে ছেয়ে গেছে, সেটি বুঝতে অসুবিধা হয় না। যারা প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই; বরং তাদেরকে এ জন্য পুরস্কৃত করা হচ্ছে। সরকারের একটি প্রকল্পে যারা অর্থ মেরে দিয়েছেন, তারা আরো বড় একটি প্রকল্পের দায়িত্ব পাচ্ছেন।
কয়লার পর পাথর চুরি হয়েছে। এরপর মহাচোরেরা আর কী চুরি করবেন, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, তারা শাস্তির আওতায় আসেননি। সুতরাং আরো বড় অঙ্কের কিছু চুরি করার জন্য তারা ফন্দি আঁটবেন। সরকারের এমন কোনো নীতিগত অবস্থান নেই যে, এই চোরদের ধরবে। পরে হয়তো দেখা যাবে অবকাঠামো হিসেবে নির্মিত সরকারের ঘরদোরও এরা বিক্রি করে দিচ্ছেন। একটি দেশে এভাবে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য চলতে পারে না। অচিরেই এ ব্যবস্থার ইতি টানা দরকার স্থায়ীভাবে। যারা একটার পর একটা চুরি করে যাচ্ছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থেই।


আরো সংবাদ



premium cement