২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আন্দোলন দমাতে সরকারের ভিন্ন কৌশল

আবারো সরকারের ভুল পথে পা

-

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কৌশল নিয়েছিল সরকার; কিন্তু তা কাজে আসেনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও ঢাকার রাজপথে আগের চার দিনের তুলনায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। শুধু রাজধানীতেই নয়, সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু তাদের আন্দোলন দমাতে সরকারপক্ষ ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছে বলেই মনে হলো। কারণ, আন্দোলনের প্রথম দিনে পুলিশ ও একদল যুবক লাঠি হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়। পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নিপীড়িত হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সরকার মনে করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে সরকারপক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেয়ার পরও শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়েনি। সহসা তারা ঘরে ফিরবে এমন ঘোষণাও আসছে না ছাত্রদের পক্ষ থেকে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সরকারের অনুরোধ ছিল, সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে, এবার তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেখা গেছে ছাত্র আন্দোলন নতুন রূপ ধারণ করেছে। কোনো কোনো এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকেরাও আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। অনেক মা খাবার বিলি করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সরকার আশা করেছিল, অভিভাবকেরা তাদের সন্তান ও শিক্ষকেরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরাবেন; কিন্তু সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেও বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ব্যাপকতা বরং বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভাবপর্যাদার সঙ্কট তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় সরকার আন্দোলন দমাতে কঠোর হতে যাচ্ছে। অপর দিকে, ছাত্র বিক্ষোভ কিভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র মতে, সেখানে সবাই একমত হয়েছেন আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ব্যাপারে।
সরকার যে এরই মধ্যে সে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে, তার প্রতিফলন দেখা গেছে গত বৃহস্পতিবারেই। এ দিন রাজধানীর মিরপুর ও চট্টগ্রামে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা লাঠি হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ও লাঠিপেটা করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এর ফলে বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আহত হয়। রাজধানীর মিরপুরে যখন ছাত্ররা যানবাহন থামিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল, তখন কিছু পুলিশ সদস্য হুইসেল বাজিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার কথা বলে। তখন মুখ ঢাকা একদল যুবক হেলমেট পরে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হাতে ছিল বাঁশ ও কাঠের লাঠি। গতকাল প্রায় সব ক’টি জাতীয় পত্রিকায় তাদের হাতে ছাত্রদের লাঠিপেটার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। পুলিশকে সাথে নিয়ে এরা ছাত্রদের ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। বিকেল ৪টায় শিক্ষার্থীরা আবারো সমবেত হয় মিরপুর ১৪ এবং ১৩-এ। পরে পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর ১৩ ও ১৪-এর সড়ক ছেড়ে দেয়া হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ ও সাদা পোশাকে কিছু লোক শিক্ষার্থীদের ঘিরে ফেলে তাদের এসওএস হারমান মেইনার স্কুল এলাকা থেকে জোর করে বের করে দেয়। মিরপুর ১৩ এলাকায় যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল, তখন হঠাৎ করে লাঠি হাতে তাদের দিকে তেড়ে আসে পুলিশ। ঠিক তখনই লাঠি নিয়ে একদল যুবক পুলিশের সাথে মিলে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। একটি ছবিতে দেখা গেছেÑ হেলমেট পরা কিছু যুবক তখন শিক্ষার্থীদের চুলের মুঠি ধরে রাখে অন্যজন লাঠি দিয়ে তাকে পেটাতে থাকে।
আমরা আশঙ্কা করছি, এ ধরনের পুলিশি ও সরকারি দলের লোকজন শিক্ষার্থীদের ওপর আরো বড় আকারে হামলা চালিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করতে পারে। অনেক শিক্ষার্থীকে মামলার মুখোমুখি দাঁড় করানো হতে পারে। সরকার এ ধরনের কঠোরতা অবলম্বন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, ছাত্রদের এ দাবির ন্যায্যতা সবাই মেনে নিয়েছেন। এ আন্দোলনের প্রতি রয়েছে গোটা দেশবাসীর সমর্থন। এ আন্দোলন দমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে আন্তরিকভাবে তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া। ভিন্ন পথ অবলম্বন করলে সরকার এর সমাধানের পথকে আরো জটিল করে তুলবে। যা কারো কাম্য নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement