২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এনজিও খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

টিআইবির সুপারিশ বিবেচিত হতে পারে

-

তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোতে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক ও উন্নয়নধর্মী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও উন্নত দেশের সহায়তায় তারা মানবকল্যাণের নামে নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। এদের কার্যক্রমের দৃশ্যমান উদ্দেশ্য সব সময় মহৎ। তবে বেশির ভাগ এনজিও তাদের সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে, অনেক এনজিওর লক্ষ্য থাকে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য হাসিল করা। একটি সম্প্রদায়কে উন্নয়ন প্রকল্পের নানা কর্মসূচি দিয়ে প্রকারান্তরে তারা নিজেদের আদর্শের দিকে আহ্বান জানায়। তবে এনজিওর মধ্যে অনেকগুলোর উদ্দেশ্য মানবকল্যাণ। ব্যাপারটি এমন যে, কোনো একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করলেও এর মধ্য দিয়ে মানবকল্যাণ হয়ে যায়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বাংলাদেশে এনজিওদের কার্যক্রম নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। ‘বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও খাত : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শিরোনামে এই গবেষণা প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এনজিও কার্যক্রমের ইতিবাচক দিকটি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে তারা মন্তব্য করেছেÑ ‘বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের এনজিও খাতে সুশাসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক চর্চা হয়েছে। এনজিওগুলোর ভেতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকি প্রতিষ্ঠান ও অনুদান প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কাঠামোগত ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ যথেষ্ট নয়।’ বাংলাদেশে পরিচালিত এনজিওদের কার্যক্রমে ইতিবাচক উন্নতির খবর দেয়া হলেও তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো, উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার দেশীয় কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের একাংশের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যরত এনজিওগুলোকে প্রকল্প অনুমোদন ও তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে বেশি ধাপ অতিক্রম করতে হয় বলে সেগুলোকে অন্য এলাকার এনজিওর তুলনায় বেশি হয়রানি ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। প্রকল্প ও তহবিল অনুমোদন এবং প্রতিবেদন জমাদানের পর নথিভুক্ত করার সময় নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায় ও এনজিও কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় নিয়মবহির্ভূত সুবিধা নেয়া হয়। পারিবারিক ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় এনজিও থেকে পরিবহনভাতা ও রেস্টহাউজে থাকার সুবিধা নেয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেয়া ও অফিস পরিদর্শনের নামে অর্থ আদায় করা হয়, যা অবৈধ।
টিআইবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের এনজিও কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছতা-গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ১৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বিবেচনার জন্য তারা এসব সুপারিশ পেশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন-২০১৬-এর বৈষম্যমূলক ও অস্পষ্ট ধারাগুলো সংস্কার এবং প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল ছাড়ের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা। এনজিও কার্যক্রমের সাথে সরকারি কাজের একটি মিল রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ খরচের মধ্যে একটা ফাঁক থাকে। স্বার্থান্বেষী একটি মহল এ ফাঁককে কাজে লাগায়। তাই কোনো প্রকল্পে যারা সুবিধাভোগী হওয়ার কথা তারা সুবিধা না পেয়ে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধ সুযোগ পায়। এ ধরনের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে টিআইবি মন্তব্য করেছে তাদের প্রতিবেদনে। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত স্থানীয় পর্যায়ের ১৫টি, জাতীয় পর্যায়ের ২৪টি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ৪৮টি এনজিওর কার্যক্রম নিয়ে তারা গবেষণা করেছে। তাই তাদের দেয়া সুপারিশগুলো বিবেচনার দাবি রাখে।
আমরা মনে করি, জাতীয় পর্যায়ে এনজিওর কার্যক্রমকে স্বচ্ছ করার জন্য এ সুপারিশগুলো বিশদ যাচাই করে প্রয়োজনীয়গুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement